‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ এই মূলমন্ত্রকে ধারণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো এবারের ঐতিহ্যবাহী ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। সোমবার সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে এই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাটি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একই স্থানে এসে শেষ হয়।
হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখরিত এই শোভাযাত্রায় ২৮টি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন দেশের অতিথিরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।
এবারের শোভাযাত্রার প্রধান আকর্ষণ ছিল ৭টি বৃহৎ মোটিফ। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের ফ্যািবাদী শাসনের প্রতিচ্ছবি ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’। এছাড়াও শোভাযাত্রায় জাতীয় প্রতীক বাঘ, ইলিশ মাছ, শান্তির প্রতীক পায়রা ও পালকি স্থান পায়। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মুসলমানদের লড়াই সংগ্রামের প্রতি সংহতি জানিয়ে একটি বিশেষ মোটিফ হিসেবে ছিল তরমুজের ফালি, যা ফিলিস্তিনিদের কাছে প্রতিরোধ ও অধ্যাবসায়ের প্রতীক।
বৃহৎ মোটিফের পাশাপাশি ৭টি মাঝারি আকারের মোটিফও শোভাযাত্রাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। এগুলোর মধ্যে ছিল সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, রঙিন চরকি, তালপাতার সেপাই, তুহিন পাখি, পাখা, ঘোড়া ও লোকজ চিত্রকলার ক্যানভাস।
ছোট আকারের মোটিফগুলোতেও ছিল বৈচিত্র্য। ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতির পাশাপাশি বাঘের মাথা, পলো, মাছের চাই, মাথাল, লাঙল ও মাছের ডোলাও শোভা পায়।
এবারের শোভাযাত্রায় বিশেষ স্থান অধিকার করে নিয়েছিল বাংলার প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পটচিত্র। প্রায় ১০০ ফুট দীর্ঘ একটি পটচিত্রে লোকজ জীবনের নানা দিক তুলে ধরা হয়। এই চিত্রে আকবর, বাংলাদেশের জাতীয় পশু বাঘ, ১৯৫২ ও ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক সংগ্রাম, ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদ, বেহুলা লখিন্দর, বনবিবি এবং গাজীরপটের ছবি আঁকা হয়েছে। প্রতিটি চিত্রে বাঘ এবং বাঘের রঙের ব্যবহার ছিল বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
উল্লেখ্য, পহেলা বৈশাখের এই আনন্দ শোভাযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করে নিরাপত্তা জোরদার করে।