বেনাপোল কাস্টমস হাউসের শুল্কায়ন গ্রুপ–২ (এ)-এর রাজস্ব কর্মকর্তা সনজু মিয়ার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং আমদানিকারকদের হয়রানির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, কাস্টমস কমিশনারের আত্মীয় পরিচয়ে তিনি প্রভাব খাটিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ আদায় করছেন, যার ফলে এই বন্দর দিয়ে শিল্পকারখানার কাঁচামাল আমদানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে
একাধিক ভুক্তভোগী আমদানিকারক প্রতিনিধি জানান, ভারত থেকে আসা পণ্যের চালান ছাড় করাতে হলে রাজস্ব কর্মকর্তা সনজু মিয়াকে নিয়মিত ‘অর্থ’ দিতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আমদানিকারক প্রতিনিধি অভিযোগ করে বলেন, “শুধু ফাইলে স্বাক্ষরের জন্যই ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং ল্যাবে পরীক্ষার ভয় দেখিয়ে তিনি ক্ষেত্রবিশেষে ২৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করেন।”
মাঠপর্যায়ের খোঁজ বলছে, অধিকাংশ আমদানিকারক প্রতিনিধিই সনজু মিয়ার কাছে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, ঘুষ না দিলে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ফাইল আটকে রাখেন, বিলম্বে শুল্কায়ন করেন এবং পণ্য ঢাকার বুয়েটে টেস্টিংয়ের নামে পাঠিয়ে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণ ও হয়রানি সৃষ্টি করেন।
আমদানিকারক দিদারুল ইসলাম বলেন, “সনজু যোগ দেওয়ার পর থেকেই চাহিদামতো টাকা না দিলে পণ্য টেস্টে পাঠানোর হুমকি দেন এবং ভেলু (পণ্যের মূল্য) বাড়িয়ে হয়রানি করেন। তার কাছে ফাইল গেলে ঘুষ ছাড়া পণ্য ছাড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।”
ব্যবসায়ীরা আরও দাবি করেন, সনজু ও তার সহযোগীদের হয়রানির কারণে বহু আমদানিকারক এখন বেনাপোল বন্দর এড়িয়ে বিকল্প বন্দরে পণ্য আমদানি করছেন, যা সরকারের বড় অঙ্কের রাজস্ব ক্ষতি করছে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, ঘুষের টাকায় সনজু মিয়া নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ গড়ে তুলেছেন, যা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করলেই সহজে বেরিয়ে আসবে।
অভিযোগ রয়েছে, ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে কেউ মুখ খুলতে চাইলে তাকে লাইসেন্স বাতিলসহ নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখানো হয়। কমিশনারের আত্মীয় পরিচয়ের কারণে তার বিরুদ্ধে সহজে কেউ কথা বলার সাহস পান না বলেও জানা গেছে। দিদারুল ইসলামের অভিযোগ, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নাসিব আরিফিনও এই ঘুষ বাণিজ্যে সনজু মিয়াকে সহযোগিতা করেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজস্ব কর্মকর্তা সনজু মিয়া তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।
তবে, কাস্টমস কমিশনার খালেদ মোহাম্মদ আবু হোসেনের সঙ্গে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৬ অক্টোবর বেনাপোল কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তার ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার আগে সহযোগী হাসিবুর রহমানকেও দুদক আটক করেছিল এবং তার কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছিল ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। ওই টাকা তিনি শামীমা আক্তারের জন্য বহন করছিলেন বলে পরে স্বীকার করেন
বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘ঘুষ-বাণিজ্যের’ অভিযোগ:

