ধর্ম-বর্ণ পেরিয়ে ভালোবাসার জয়: বিষপান করে বাঁচলেন, ফিরে পেলেন প্রেমিক স্বামীকে

আরো পড়ুন

লাইলি-মজনুর মতো প্রেম কেবল সাহিত্যেই নয়, বাস্তব জীবনেও যে ঘটতে পারে, তারই এক হৃদয়ছোঁয়া বাস্তব উদাহরণ গড়েছেন যশোরের কেশবপুরের সোহাগী দাস ও আব্দুর রহিম।

দুই বছর আগে কেশবপুর উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের মুসলিম যুবক আব্দুর রহিমের সঙ্গে পরিচয় হয় একই উপজেলার হিন্দু ধর্মাবলম্বী তরুণী সোহাগী দাসের। ধীরে ধীরে পরিচয় গড়ায় গভীর প্রেমে। একে অপরকে না দেখলে দিন কাটত না। কিন্তু তাদের এই সম্পর্কের পথ ছিল কঠিন—ধর্মীয় পার্থক্য, সামাজিক বাধা ও পারিবারিক বিরোধ একাধিকবার তাদের প্রেমকে হুমকির মুখে ফেলে।

তবুও ভালোবাসা থেমে থাকেনি। সমাজের নিয়ম-রীতি, ধর্মের দেয়াল ভেঙে গত ২৩ জুন সোহাগী পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন রহিমকে। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাম নেন আয়েশা খাতুন। যশোরের কুয়াদা গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে শুরু হয় নতুন জীবনের স্বপ্ন।

তবে এই ভালোবাসার গল্পে বাধা হয়ে দাঁড়ায় আয়েশার পরিবার। ২৪ জুন তার বাবা পরিমল দাস কেশবপুর থানায় জিডি করে মেয়েকে ফিরে পেতে পুলিশ নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। মানসিক চাপে পড়ে আয়েশা বাথরুমে গিয়ে বিষপান করেন। দ্রুত যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসায় প্রাণে বেঁচে যান তিনি। এরপর তাকে বাবার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

এই পরিস্থিতিতে হার মানেননি রহিম। স্ত্রীর ফিরে পাওয়ার আশায় আইনের দ্বারস্থ হন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন এবং সহায়তা চান মানবাধিকার উন্নয়ন উদ্যোগ ফাউন্ডেশনের। আদালতের নির্দেশে আয়েশাকে হাজির করার আদেশ আসে। পাশাপাশি মানবাধিকার সংগঠনের চাপের মুখে অবশেষে বৃহস্পতিবার আয়েশার পরিবার মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়।

সেই দিনই আয়েশা ফিরে যান তার স্বামীর কাছে। যশোরের নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে দাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা দেন—তিনি স্বেচ্ছায়, ভালোবেসে, নিজের ইচ্ছায় আব্দুর রহিমকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন। উপস্থিত মানুষজন যেন সিনেমার আবেগঘন এক দৃশ্য দেখছিলেন—চারদিকে করতালির ধ্বনি, আবেগাপ্লুত চোখে কান্না।

রহিমের আইনজীবী রুহিন বালুজ বলেন, “ভালোবাসা নিয়ে অনেক মামলা দেখি, কিন্তু আয়েশা ও রহিমের সম্পর্ক আলাদা। আয়েশা শুধু ধর্ম পরিবর্তন করেননি, ভালোবাসার মানুষকে না পেয়ে মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই মৃত্যুও ভালোবাসাকে পরাজিত করতে পারেনি।”

এই গল্প যেন প্রমাণ করে—ভালোবাসা সত্যিই কোনো বাধা মানে না। সমাজ ও ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত জয় হয় হৃদয়ের টান আর অটুট ভালোবাসার।

আরো পড়ুন

সর্বশেষ