যশোরের কেশবপুরে মডার্ন হাসপাতালের বিরুদ্ধে অপচিকিৎসার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। নবজাতকের মৃত্যুর পাশাপাশি এক প্রসূতির জরায়ু কেটে ফেলার ঘটনায় হাসপাতালের মালিক রবিউল ইসলাম, চিকিৎসক আবু বকর সিদ্দিক ও মণিরামপুর উপজেলার কাঠালতলা গ্রামের শাহিনুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলাটি করেন মণিরামপুরের ঝাপা দক্ষিণপাড়ার ফিরোজা বেগম।
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদুর রহমান অভিযোগটি আমলে নিয়ে কেশবপুর থানার ওসিকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী এসএম শরিফুল ইসলাম রাসেল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বাদী ফিরোজা বেগমের মেয়ে জলি খাতুন গর্ভবতী হলে গত ১২ নভেম্বর তৃতীয় আসামি শাহিনুর রহমানের মাধ্যমে তাকে কেশবপুর মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আলট্রাসনোসহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান ডাক্তার শারমিন সুলতানা শিবলী। পরীক্ষায় স্বাভাবিক রিপোর্ট আসলেও ২২ নভেম্বর জলির প্রসববেদনা শুরু হলে শাহিনুরের পরামর্শে ফের মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে রাতের শিফটে দায়িত্বরত চিকিৎসক আবু বকর সিদ্দিক তাকে ভর্তি করেন এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ক্লিনিকের মালিক রবিউল ইসলাম সিজার করানোর নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে স্বাভাবিক প্রসব ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে ভয় দেখান। রাত ১২টায় জলির সিজার অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পরই নবজাতকের মৃত্যু হয়।
প্রসূতির অবস্থা ও চিকিৎসার গাফিলতি
জলি খাতুনকে ২৫ নভেম্বর বাড়ি নিয়ে যাওয়া হলে তিনি কয়েকদিন পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অন্যত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা যায়, জলির জরায়ুর দুটি অংশই কেটে ফেলা হয়েছে। এ নিয়ে অভিযুক্তদের কাছে জানতে চাইলে তারা হুমকি দেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
বাদী আরও অভিযোগ করেন, মডার্ন হাসপাতালে সিজারিয়ানের উপযুক্ত ব্যবস্থা ছিল না এবং চিকিৎসক আবু বকর সিদ্দিকের প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতার সনদও ছিল না। অভিযুক্তদের অবহেলা ও অপচিকিৎসার কারণেই নবজাতকের মৃত্যু হয় এবং জলির জরায়ু কেটে ফেলা হয় বলে মামলায় দাবি করা হয়েছে।
পূর্বের অভিযোগ ও মডার্ন হাসপাতালের ইতিহাস
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগেও মডার্ন হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার একাধিক অভিযোগ ওঠে। একাধিক প্রসূতি ভুল অপারেশনের শিকার হয়েছেন বলে জানা যায়। বিভিন্ন সময় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও হাসপাতালের মালিক রবিউল ইসলাম প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে পার পেয়ে যান। এমনকি একাধিকবার ক্লিনিকটি সিলগালা করা হলেও কিছুদিন পর আবার চালু করা হয়।
এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।