মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির আশায় ঘোষিত যুদ্ধবিরতির রেশ কাটতে না কাটতেই ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, ২৪ জুন মঙ্গলবার ইরান থেকে ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তারা সফলভাবে শনাক্ত ও প্রতিহত করেছে।
বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েল পুরোপুরি সক্রিয় করেছে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঘরের বাইরে না যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, যুদ্ধবিরতির ঘোষণার মাত্র কিছুক্ষণ পরেই এ হামলার ঘটনা ঘটে। তারা জানায়, “আমাদের প্রতিরক্ষা ইউনিট দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রটি আকাশেই ধ্বংস করে দেয়। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবে হামলার আশঙ্কায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় জনগণের মধ্যে।
এর আগে দিনটিতেই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ এক বার্তায় ঘোষণা দেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে এবং কেউ যেন এটি লঙ্ঘন না করে। ইরান রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার পর ইসরায়েলও আনুষ্ঠানিকভাবে একে স্বীকৃতি দেয়। এতে করে অনেকেই আশা করেছিলেন দীর্ঘ সংঘাতের অবসান ঘটতে চলেছে।
তবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার এই ঘটনায় যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইরান হয়তো এভাবে একটি বার্তা দিতে চায়—যুদ্ধবিরতি দুর্বলতার প্রতীক নয়, বরং প্রয়োজন হলে তারা পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রস্তুত।
তেহরানভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আমির রেজা বলেন, “ইরান একদিকে শান্তির বার্তা দিচ্ছে, অন্যদিকে সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখছে। এটি দ্বিমুখী কৌশলের ইঙ্গিত।”
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সামরিক পাল্টা জবাব আসেনি, তবে সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এ ঘটনা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেকেই একে বর্তমান নেতৃত্বের কূটনৈতিক ব্যর্থতা বলেও উল্লেখ করছেন।
সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যুদ্ধবিরতির খবরে যারা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে শুরু করেছিলেন, তারা ফের নিরাপত্তাহীনতায় আশ্রয়কেন্দ্রের পথে ফিরছেন।
জাতিসংঘ এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না দিলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও রাশিয়া জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির সম্ভাবনাকে আরও দুরূহ করে তুলেছে। শক্তির প্রদর্শনী চালিয়ে যাচ্ছে উভয় পক্ষ, যার চাপে বিপন্ন হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষের জীবন।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে? শান্তি নাকি সংঘাত—সবচোখ এখন তেহরান ও তেল আবিবের দিকে।