ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে: বিপিসি’র বিকল্প উৎস খোঁজার প্রস্তুতি

আরো পড়ুন

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জাহাজে তেল পরিবহনের খরচ বাড়তে শুরু করেছে এবং ইরানের হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে তেলের দামে বড় উত্থান ঘটার পাশাপাশি আমদানি ব্যাহত হতে পারে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার বিকল্প উৎস খুঁজছে।

দেশের জ্বালানি তেল আমদানির একমাত্র সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিপিসি জানিয়েছে, পরিশোধিত জ্বালানি তেলের ২০ শতাংশ এবং অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ৩০ শতাংশ হরমুজ প্রণালি ব্যবহার করে পরিবহন করা হয়। এই প্রণালি বন্ধের আশঙ্কা মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

তবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার (১৭ জুন) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে আরও অপেক্ষা করা হবে, এখন মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে না। তিনি বলেন, “ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধটা আপাতত পর্যবেক্ষণ করছি। যুদ্ধ বেশি দিন চললে আমাদের ওপর একটা প্রভাব পড়বে।”

বাংলাদেশে দুই ধরনের জ্বালানি তেল আমদানি করা হয় – পরিশোধিত ও অপরিশোধিত। দেশের একমাত্র জ্বালানি পরিশোধনাগারের সক্ষমতা অনুযায়ী বছরে ১৫ লাখ টনের বেশি অপরিশোধিত তেল আমদানির সুযোগ নেই। অপরিশোধিত তেল সৌদি আরব (অ্যারাবিয়ান লাইট) এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত (মারবান লাইট) থেকে আমদানি করে বিপিসি। সাধারণত দুই মাস আগের গড় দাম ধরে বিল হিসাব করা হয়; অর্থাৎ, জুনে সরবরাহ করা তেলের দাম মার্চের গড় দাম ধরে নির্ধারিত হয়, তাই এখনো দামে সরাসরি প্রভাব পড়েনি।

বিপিসি সূত্র জানায়, এই দুই দেশ থেকেই অপরিশোধিত তেল আসে হরমুজ প্রণালি হয়ে। গতকালও একটি জাহাজ রওনা করেছে এবং এতে জাহাজের পরিবহন খরচ কিছুটা বেড়েছে। যদিও আবুধাবি থেকে ভিন্ন পথে জাহাজ আসার সুযোগ আছে, তবে হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে বিকল্প পথে তেল আনলে খরচ আরও বাড়বে। মধ্যপ্রাচ্যের বিকল্প উৎস হিসেবে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।

বিপিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিরতা দীর্ঘায়িত হলে দাম নির্ধারণের ওপর প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি হরমুজ প্রণালির মাধ্যমে তেল পরিবহনে ঝুঁকি বৃদ্ধির কারণে জাহাজ ভাড়া বাড়বে। জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৭ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ বেশি আমদানি করে ডিজেল, ফার্নেস, অকটেন, জেট ফুয়েলের মতো পরিশোধিত জ্বালানি তেল। এগুলোর কোনোটিই মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসে না; আসে মূলত সিঙ্গাপুর ও তার আশপাশের কয়েকটি দেশ থেকে। বছরে ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টন জ্বালানি তেল বিক্রি করে বিপিসি, যার মধ্যে ৪৬ লাখ টন ডিজেল। দেশের একমাত্র শোধনাগারটি থেকে পাওয়া যায় ৬ লাখ টন ডিজেল, বাকিটা আমদানি করতে হয়।

বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লেও এখনো তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। তেলের মজুত ও সরবরাহ নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, যুদ্ধ চলমান থাকলে আমদানি খরচ বাড়তে পারে, আর ইরানের হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার মতো বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহ  করা হতে পারে।

আরো পড়ুন

সর্বশেষ