ফেনীর সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামে হাঁস ও কবুতর চুরির অভিযোগ তুলে দুই কিশোরকে প্রকাশ্যে মারধর করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের মায়েদের ‘নাকে খত’ দিয়ে জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ১ মে রাতে ‘খালুর দোকান’ এলাকায় অনুষ্ঠিত একটি সালিশ বৈঠকে এই ঘটনা ঘটে। সেখানে প্রধান সালিশদার ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দেলু।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, দেলোয়ার হোসেন লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন, আর দুই কিশোরকে লাঠিপেটা করা হচ্ছে। পাশাপাশি কিশোরদের মা’দের সবার সামনে নতজানু হয়ে ক্ষমা চাইতে দেখা যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে গ্রামের এক বাড়ি থেকে হাঁস ও কবুতর চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে একই গ্রামের দুই কিশোরকে ধরে নিয়ে আসা হয়। বিকেলে মারধরের পর সন্ধ্যায় সালিশে তাদের হাজির করা হয়। সেখানে স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা উপস্থিত ছিলেন। সালিশে কিশোরদের মায়েদেরও ডেকে এনে অপমানজনকভাবে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়।
এক কিশোরের মা বলেন, “আমার সন্তান যদি ভুল করে থাকে, তার জন্য আইন আছে। কিন্তু একজন মা হিসেবে এভাবে অপমানিত হবো, তা ভাবিনি।”
অন্য কিশোরের মা বলেন, “আমি কোনো অপরাধ করিনি। কেবল মা হওয়ার কারণে জনসম্মুখে মাথা নিচু করতে হলো।”
প্রধান সালিশদার দেলোয়ার হোসেন দেলু বলেন, “আমি কাউকে মারধর করিনি। কিশোরদের মায়েরা নিজেরাই আমাদের অনুরোধ করেছিলেন বিষয়টি সামাজিকভাবে মীমাংসা করতে। তারা স্বেচ্ছায় ক্ষমা চেয়েছেন।”
তবে ফেনী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সামছুজ্জামান বলেন, “ভিডিও আমাদের নজরে এসেছে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া অপরাধ। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা নাসরীন কান্তা বলেন, “নারীকে জনসম্মুখে হেয় করার কোনো অধিকার কারও নেই। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে।
এদিকে, এ ঘটনায় ফেনী জেলা বিএনপি দেলোয়ার হোসেনের সব পর্যায়ের দলীয় পদ স্থগিত করেছে। জেলা সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল জানান, কেন্দ্রীয় নির্দেশে তদন্ত চলছে এবং সোমবারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

