গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যাপক হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৩২-এ পৌঁছেছে, যাদের মধ্যে বহু নারী ও শিশু রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সরকারি মিডিয়া অফিস এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ভোরে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস, দেইর আল-বালাহ, রাফাহসহ বিভিন্ন এলাকায় চালানো হামলায় ব্যাপক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের খবর পাওয়া গেছে। এটি ১৯ জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির পর গাজায় সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা বলে মনে করা হচ্ছে।
ভয়াবহ হামলা ও ভাঙচুর
গাজার আল জাজিরার আরবি সংবাদদাতা জানিয়েছেন, খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলি ট্যাঙ্কগুলো তীব্র গোলাগুলির পাশাপাশি ব্যাপক গোলাবর্ষণ করছে।
চিকিৎসক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, গাজার দেইর আল-বালাহতে তিনটি বাড়ি, গাজা শহরের একটি ভবন এবং খান ইউনিস ও রাফাহতে বেশ কয়েকটি স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।
এক স্থানীয় শিক্ষক আহমেদ আবু রিজক বলেন, “গাজার সর্বত্র ইসরায়েলি হামলার শব্দ শুনে আমরা ভয়ে ঘুম থেকে উঠেছিলাম। বাচ্চারা আতঙ্কিত ছিল, আমাদের আত্মীয়স্বজন খোঁজ নিতে ফোন করছিল। রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স ছুটে চলছিল, আর মানুষ তাদের প্রিয়জনের মরদেহ নিয়ে হাসপাতালে ছুটছিল।”
তিনি আরও বলেন, “গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালে সর্বত্র রক্ত আর আহতদের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। এমনকি মৃতদেহ পরিবহনের জন্য গাধার গাড়ি পর্যন্ত ব্যবহার করা হচ্ছে।”
ইসরায়েলের ব্যাখ্যা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, তারা হামাসের ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে’ হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এই হামলার নির্দেশ দিয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, “হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং মধ্যস্থতাকারীদের দেওয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই ইসরায়েল ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তির মাধ্যমে হামাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।”
হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, হামলা চালানোর আগে ইসরায়েল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শ করেছিল।
এদিকে, ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) এক বিবৃতিতে ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করে বলেছে, “নেতানিয়াহু এবং তার ‘রক্তপিপাসু নাৎসি সরকার’ গাজায় যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছে। তবে প্রতিরোধের শক্তির ওপর তারা কোনোভাবেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারবে না।”
ভয়াবহ প্রাণহানি ও মানবিক সংকট
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৮,৫৭২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,১২,০৩২ জন আহত হয়েছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের সর্বশেষ আপডেটে মৃতের সংখ্যা ৬১,৭০০-এর বেশি বলা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া হাজারো মানুষকেও মৃত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
গাজার ২১ লাখ জনসংখ্যার অধিকাংশই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আনুমানিক ৭০ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। খাদ্য, ওষুধ ও আশ্রয়ের তীব্র সংকট চলছে।
বিশ্ব সম্প্রদায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য চাপ সৃষ্টি করলেও ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মতপার্থক্যের কারণে সমাধান এখনো অনিশ্চিত।