দেশের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে আগুন নেভানোর দায়িত্ব পালনের সময় ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ফায়ার সার্ভিস কর্মী সোয়ানুর জামান নয়নের প্রথম জানাজা বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বাদ জোহর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের হেডকোয়ার্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুর্ঘটনার বিবরণ
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত ৩টা ১৫ মিনিটে সচিবালয়ে আগুন নেভানোর সময় ট্রাকের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন নয়ন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নয়নের সংক্ষিপ্ত জীবনচিত্র
ফায়ার ফাইটার সোয়ানুর জামান নয়ন (২৪) ছিলেন একজন দক্ষ ও নিবেদিত কর্মী। সিলেটে তার কর্মজীবন শুরু হলেও কর্মদক্ষতার কারণে তাকে সম্প্রতি ঢাকার তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনে সংযুক্ত করা হয়। দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ফায়ার সার্ভিস স্পেশাল টিমের সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন।
শোকাবহ পরিবেশ
নয়নের মরদেহ ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে এনে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো হয়। জানাজার আগে তাকে শ্রদ্ধা জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। পুরো প্রাঙ্গণে ছিল শোকের ছায়া। সহকর্মীদের চোখ ছিল অশ্রুসিক্ত।
নয়নের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, “আমার ভাইয়ের এভাবে চলে যাওয়া মেনে নেওয়া কঠিন। দায়িত্ব পালনকালে যদি পুলিশ সড়কটি বন্ধ করত, তাহলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটত না। আমরা আশা করি ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া
জানাজার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “নয়নের অকাল মৃত্যু আমাদের সবাইকে মর্মাহত করেছে। সে তার দায়িত্ব পালনের সময় জীবন উৎসর্গ করেছে। তার মা-বাবার কী অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়। নয়নের পরিবারের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা রয়েছে।”
পরিবারে শোকের মাতম
নয়নের বাড়িতে শোকের পরিবেশ বিরাজ করছে। তার মা নার্গিস বেগম একমাত্র ছেলের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন এবং বুক চাপড়ে আহাজারি করছেন।
পরিস্থিতি ও করণীয়
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা সড়ক নিরাপত্তা এবং ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সুরক্ষায় নতুন করে পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দেয়। আমরা নয়নের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।