নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচির আয়োজন করেছে। ‘আলোয় আলোয় স্মৃতি সমুজ্জ্বল’ শিরোনামে আয়োজিত এই কর্মসূচির মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও ইতিহাসচেতনা জাগাতে চায় সংগঠনটি।
১ জুলাই রাত ২টার পর থেকেই শহীদ মিনার চত্বরে জড়ো হতে থাকেন ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা। মোমবাতির আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে স্মৃতির মিনার। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কর্মসূচি, যেখানে নেতৃত্ব দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম মহানগরসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা। ব্যানার, পোস্টার ও পতাকা হাতে নিয়ে সকলে সম্মিলিত কণ্ঠে গাইলেন জাতীয় সংগীত, যার মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে তাঁদের দেশপ্রেম ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার।
১৯৭৩ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে আসে। বহু তরুণ শহীদ হন সে সময়। সেই স্মৃতিকে কেন্দ্র করেই প্রতিবছর বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে।
ছাত্রদল জানায়, এটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক শোডাউন নয়, বরং ইতিহাসনির্ভর, মূল্যবোধভিত্তিক প্রজন্ম গঠনের একটি প্রচেষ্টা। কর্মসূচি শুধু মোমবাতি প্রজ্বালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না—পুরো জুলাই মাসজুড়েই চলবে নানামুখী সচেতনতামূলক ও সাংস্কৃতিক আয়োজন।
কী থাকছে জুলাইজুড়ে:
- আলোচনা সভা: দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ও ছাত্রআন্দোলন নিয়ে মতবিনিময়।
- মানববন্ধন ও র্যালি: ব্যানার-ফেস্টুনসহ গণমানববন্ধনের মাধ্যমে স্বৈরাচারবিরোধী বার্তা।
- প্রদর্শনী: শহীদদের ছবি, দলিলপত্র ও আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে স্থায়ী প্রদর্শনী।
- রক্তদান কর্মসূচি: মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে স্বেচ্ছায় রক্তদান।
- সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: সংগীত, কবিতা, নাটক ইত্যাদির মাধ্যমে ইতিহাসকে তুলে ধরা।
কর্মসূচির উদ্বোধনী বক্তব্যে সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন,
“জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান আমাদের ইতিহাসে একটি উত্তাল অধ্যায়। আমরা এই অধ্যায়কে কেবল স্মরণ করি না, বরং এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।”
সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন,
“বর্তমানেও গণতন্ত্র ও ছাত্র অধিকার হুমকির মুখে। তাই ইতিহাস স্মরণ করে নতুন প্রজন্মকে সচেতন করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।”
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় ছাত্রদলের এ ধরনের ইতিহাসভিত্তিক উদ্যোগ একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। এটি শুধু স্মৃতিচারণ নয়, বরং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গঠনের পথপ্রদর্শক হিসেবেও কাজ করতে পারে।