যশোরের চৌগাছা মডেল হাসপাতালে ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নতুন ভবন ১৮ মাস ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। দীর্ঘ সময় ধরে ভবনটি চালু না হওয়ায় জানালা-দরজা ও আসবাবপত্র নষ্ট হতে শুরু করেছে। ৫০ শয্যার হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার উদ্দেশ্যে এই ভবন নির্মাণ করা হলেও এখনো চালু হয়নি প্রশাসনিক অনুমোদনের অভাবে। এতে করে হাসপাতালের রোগীদের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মূল ভবনসহ হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা। ২১ কোটি ৪৬ লাখ টাকায় ছয়তলা বিশিষ্ট মূল ভবনটি নির্মিত হয় ২০২১ সালের ২৯ এপ্রিল শুরু হয়ে শেষ হয় ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের জন্য পাঁচটি আবাসিক ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা, যেগুলোর কাজ শেষ হয় ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট। অক্সিজেন প্ল্যান্টসহ সরবরাহ লাইন বসানোয় ব্যয় হয়েছে আরও ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভবনটি চালু না হওয়ায় চৌগাছাসহ আশপাশের ঝিকরগাছা, মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর এলাকার রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন না। ৫০ শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় মেঝে ও বারান্দায় থেকেও চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাদের।
সিংহঝুলী গ্রামের বাসিন্দা শাহিনুর রহমান জানান, “জায়গার অভাবে রোগীদের যেখানে-সেখানে থাকতে হচ্ছে, যা খুবই কষ্টদায়ক। দ্রুত নতুন ভবনটি চালু হওয়া দরকার।”
চৌগাছা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. আনোয়ারুল আবেদীন বলেন, “হাসপাতালটি নামেই মডেল। এখানে চিকিৎসক ও জায়গার সংকট রয়েছে। রোগীদের দুর্ভোগ কমাতে নতুন ভবন চালু এবং জনবল নিয়োগ জরুরি।”
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, “নির্মাণকাজ শেষে ভবনগুলো স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন ভবন চালুর বিষয়টি তাদের উপর নির্ভর করছে।”
চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহসানুল মিজান রুমী বলেন, “প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত ১০০ শয্যার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব নয়। আসবাব, জনবল, রোগীর বরাদ্দ—সবই এর সাথে জড়িত।”
যশোর সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অনুমোদনের জন্য একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, চলতি মাসেই অনুমোদন মিলতে পারে।
এই বাস্তবতায় দ্রুত প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়ে ভবনটি চালুর দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী, যাতে করে চিকিৎসা সেবায় ভোগান্তি কমে আসে।