নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর
যশোরের ৮ উপজেলায় বছরের পর বছর শূন্য রয়েছে ৫৪৩টি চিকিৎসক-কর্মকর্তার পদ। এর মধ্যে ১ম শ্রেণির ৬২টি পদই খালি। দীর্ঘদিন যাবত এসব পদ শূন্য থাকায় সেখানকার রোগী ও দুর্ঘটনাকবলিত মানুষ দ্রুত চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন না। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালই তাদের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড় কিছু ঘটলেই অর্থ সময় শ্রম ব্যয় করে তাদের সেখানে ছুটতে হয়। সদর, চৌগাছা, ঝিকরগাছা, শার্শা, বাঘারপাড়া, অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত যশোর জেলা। বর্তমানে এ জেলায় জনসংখ্যা প্রায় ৩৩ লাখ।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এখানকার আটটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ম শ্রেণি থেকে ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত চিকিৎসক কর্মকর্তা ও কর্মচারী পদ রয়েছে ১ হাজার ৭শ’ ৯৬টি। এরমধ্যে বছরের পর বছর শূন্য রয়েছে ৫৪৩টি পদ। কর্মরত রয়েছেন ১ হাজার ২৫৩ জন। প্রথম শ্রেণির চিকিৎসক কর্মকর্তা নেই ৬২টি পদে। ২য় শ্রেণির পদ শূন্য রয়েছে ২৪টি। সার্জারি বিভাগে ৭টি জুনিয়র কনসালটেন্টের পদ রয়েছে। জুনিয়র মেডিসিন কনসালটেন্টের পদ রয়েছে জুনিয়র মেডিসিন কনসালটেন্টের পদ রয়েছে ৭টি।
এ ১৪টি পদ ছাড়াও নবসৃষ্ট অর্থোপেডিকস বিভাগে ৩টি জুনিয়র কনসালটেন্ট ৩টি, কার্ডিও জুনিয়র কনসালটেন্ট ৩টি, চক্ষু কনসালটেন্ট ৩টি, ইএনটি জুনিয়র কনসালটেন্ট ৩টি এবং চর্ম ও যৌন জুনিয়র কনসালটেন্টের পদ রয়েছে ৩টি। এসব পদ শূন্য রয়েছে বছরের পর বছর। তারপরও সেখানে কোন জনবল নিয়োগ দেয়া হয় না। এছাড়া সহকারী সার্জনের ৭০টি পদে কর্মরত রয়েছেন ৬৬ জন। ৪টি পদ শূন্য রয়েছে। মেডিকেল অফিসারের ৩৭টি পদের মধ্যে ৩১টি পদে জনবল থাকলেও ৬টিতে নেই।
অ্যানেসথেসিয়ার ৮টি পদের ভেতর ৫টি পদ রয়েছে শূন্য। চিকিৎসক ছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদ প্রায় শতভাগ শূন্য। চিকিৎসা ক্ষেত্রে জুনিয়র কনসালটেন্ট থেকে ধরা হয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে। এসব পদ রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু তাদের শূন্য পদ কখনো পূরণ হয় না। কোন কোন চিকিৎসকের পদ এক যুগেরও বেশি সময় শূন্য রয়েছে। ফলে, গ্রামের মানুষ উপজেলা পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পাচ্ছেন না। এ পরিস্থিতিতে তাদের অর্থ খরচ করে ছুটতে হচ্ছে জেলা শহরে। এখানে রয়েছে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল। সেখানে জুনিয়র কনসালটেন্ট বিশেষজ্ঞ একাধিক চিকিৎসক রয়েছেন। রুটিন মোতাবেক তারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেন এবং মেডিকেল কলেজে ক্লাস নেন। এ অবস্থায় উপজেলা পর্যায়ের রোগীদের জেলা শহরের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
ঝিকরগাছা উপজেলার মাটিকুমড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পায়ে ব্যথা সমস্যায় ভুগছেন। গত ২৬ ফেরুয়ারি উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে গেলে পাঠিয়ে দেয় যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে চিকিৎসা করানোর মতো অর্থ আমার নেই। যেকারণে যেতে পারছিনা।
বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রামের রফিকুল বিশ্বাস জানান, তিনি গত ৫ মাস আগে ব্রেইনস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর কোন চিকিৎসা নেই। আমাকে ২শ টাকা খরচ করে যেতে হয় যশোর হাসপাতালে। অনেক সময় টাকার অভাবে সময়মতো চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না।
ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রশিদুল আলম জানান, আমাদের এখানে চিকিৎসকের ২৩টি পদ থাকলেও আছেন ১৫ জন। অন্যান্য পদেও প্রয়োজনের তুলনায় লোকবল নেই। যেকারণে চিকিৎসা সেবায় কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে শূন্য পদ অনেক। জনগণের সেবা দিতে জনবল নিয়োগ দরকার। তার চেয়ে বেশি দরকার চিকিৎসক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ পদে পদোন্নতি দেয়া। অনেক মেডিকেল অফিসার রয়েছেন যারা এফসিপিএস, বিসিএস (উচ্চতর) ডিগ্রি অর্জন করেও পদোন্নতি পাচ্ছেন না। ওই সকল ডিগ্রিধারী মেডিকেল অফিসারদের পদায়ন দেয়া হলে বিশেষজ্ঞ পদগুলো সহজে পূরণ হতো। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, দেরিতে হলেও গ্রাজুয়েশন ডিগ্রিধারী মেডিকেল অফিসারদের বিশেষজ্ঞ পদে পদায়ন করার প্রক্রিয়া চলছে। আশা করা যায়, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে আমরা প্রথম শ্রেণি বাদে অন্যান্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আহবান করেছি।
যশোর আড়াইশ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুণ অর রশিদ জানান, আমাদের হাসপাতালে যশোর ছাড়াও আশাপাশের ৩টি জেলা থেকে রোগী আসে। প্রতিদিন গড়ে বহিঃবিভাগে ১২-১৫ হাজার রোগী চিকিৎসা গ্রহন করছেন। ভর্তি রোগী থাকে ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ রোগী। এতে করে আমাদের চিকিৎসক- সেবিকাদের উপর বাড়তি চাপ পড়ছে। উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক থাকলে এই চাপ পড়তো না। গ্রামের মানুষ বিশেযজ্ঞ চিকিৎসক না পেয়ে আমাদের হাসপাতালে আসছেন।
জাগো/জেএইচ