বান্দরবানের যে বাজারে নারীরাই বিক্রেতা

আরো পড়ুন

প্রতিনিধি : বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এখানে মূলত পুরুষরাই কৃষির সঙ্গে জড়িত। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে। এখন পুরষদের পাশাপাশি নারীরাও অবদান রাখছেন এই পেশায়। বিভিন্ন অঞ্চলের মতো এমন দৃশ্য দেখা যায় পার্বত্য জেলা বান্দরবানেও। অন্য এলাকার তুলনায় বান্দরবানে কৃষি ও প্রকৃতি কিছুটা ভিন্ন ধরনের। এক সময় যেখানে শুধু জুম চাষ হতো এখন সেখানে অন্যান্য কৃষি পণ্যের পাশাপাশি সবজিও চাষ হচ্ছে।

বান্দরবানে বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষের মূল কারিগর সেখানকার নারীরা। বিভিন্ন সবজি চাষ করে পরিবারের আর্থিক সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি নিজেরাও স্বাবলম্বী হচ্ছেন। সবজি উৎপাদন থেকে ‍শুরু করে বাজারে নিয়ে তা বিক্রি করা সবই করছেন নারীরা।

বান্দরবানের মধ্যম পাড়ায় স্বাবলম্বী হওয়া পাহাড়ি নারীদের একজন ম্যানুমে মার্মা (৫২)। টানা আট বছর ধরে এই বাজারে ব্যবসা করছেন তিনি। ম্যানুমে মার্মা তার নিজের জমিতে ফলানো সবজি নিয়ে এসেছেন বান্দরবান পৌর এলাকার মারমা বাজারে। আজ ছয় রকমের সবজি নিয়ে এসেছেন তিনি। এসব সবজির মধ্যে রয়েছে কাঁকরোল, করলা, কাঁচকলা, পেঁপে, লাল শাক আর পাহাড়ি বেগুন।

শুধু ম্যানুমে মার্মা নন, এমন আরও অনেক পাহাড়ি নারীই এই বাজারে এসেছেন যারা সবজিসহ নানা ধরনের নিত্যপণ্য বিক্রি করছেন।

ম্যানুমে মার্মা বলেন, গত আট বছর ধরে আমি বিভিন্ন বাজারে সবজি বিক্রি করে আসছি। আমার স্বামী একজন কৃষক। তিনি সারাদিন জুম চাষে থাকেন। বাজারে সবজি বিক্রির কাজে আমাকে সহয়তা করেন। এখানে সবজি বিক্রি করে আমাদের চারজনের পরিবার ভালোই চলছে। এ ছাড়া ছেলে-মেয়েকেও কলেজে পড়াচ্ছি।

থানকুনিপাতা, টকপাতা, কাঁকরোল, উস্তা, টমেটো, ওলকচু ও বাঁশকোড়ল নিয়ে পাশে বসেছেন সিংরো মার্মা, তিনি শহরের বালাঘাটা লেমু ঝিরি থেকে এসেছেন মারমা বাজারে। সকাল ৭টায় দুইবোন মিলে বাজারে এসেছেন সবজি বিক্রির জন্য। সবজি বিক্রি করে তাদের সংসার ভালোই চলছে।

তিনি বলেন, আমরা দুই বোন মিলে বাড়ির আঙ্গিনায় সামান্য জমিতে সারা বছর বিভিন্ন সবজি চাষ করি। সেসব সবজিই বাজারে নিয়ে আসি। এ কাজে আমার বাবা-ভাই আমাকে সহযোগিতা করেন। কিন্তু বিক্রির কাজটা আমিই করি।

পাহাড়ের গ্রাম্যবাজারগুলিতে পাহাড়ি নারীদের সবজি বিক্রির দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। দরিদ্র পরিবারের নারীরা পাহাড়ের দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন সবজি নিয়ে বাজারগুলোতে বিক্রি করেন। অনেকে আবার পথের পাশে বসেও বিক্রি করেন। কেউ কেউ স্থানীয় পাইকারি বাজারে সবজি কিনে গ্রামের বাজার বা রাস্তার বিক্রি করেন। এসব পণ্য বিক্রির অর্থ দিয়েই তাদের সংসার চলে।

এই মারমা বাজারে বিক্রেতাদের মধ্যে নারীরা এগিয়ে। সারা বছরই এখানে পাওয়া যায় বন-জঙ্গল থেকে আহরিত নানান ফল আর শাক-সবজি। দরিদ্র নারীরা সংসারের টানাপড়েন কমাতে বুনো সবজি সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে আসেন বিক্রয়ের জন্য। আর এসব ভেজালমুক্ত সবজি কিনতে ক্রেতারা প্রতিদিন সকাল-বিকাল ভিড় জমান।

জুমে উৎপাদিত (পাহাড়ে সনাতন পদ্ধতিতে চাষ করা জমি) ফলমূল এবং বন-জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করা নানা জাতের সবজি নিয়ে বিকেলে বিক্রি করতে আসেন তারা। সবজির মধ্যে বাঁশকুড়ল, তারাগাছ, কচুশাক, কচুলতি, কাঁচা-পাকা পেঁপে, থানকুনি পাতা থেকে শুরু করে কলার মোচাসহ রয়েছে বিভিন্ন টাটকা সবজি।

শহরের কেজি স্কুল থেকে আসা ক্রেতা পারভেজ বলেন, এই বাজার থেকেই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ক্রয় করি। এসব সবজির দাম একটু বেশি। তবে পাহাড়ি টাটকা সবজি বলে দাম সামান্য বেশি হলেও এখান থেকেই নিয়ে যাই।

আরেক ক্রেতা সুচি চাকমা বলেন, আমি প্রতি সপ্তাহের রোববার ও বুধবার (বাজার বার) এখান থেকে বাজার করি। এখানে নারী বিক্রেতারা সবাই অনেক দূর-দূরান্ত থেকে পণ্য নিয়ে আসেন।

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ