ঐতিহাসিকভাবে, পহেলা বৈশাখ ছিল একটি ঋতুধর্মী উৎসব যা কৃষিকাজের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল। মোঘল সম্রাট আকবর কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে বাংলা সন প্রবর্তন করেন। এই নতুন সন হিজরি চান্দ্র সন ও বাংলা সৌর সনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল।
অতীতে, পহেলা বৈশাখের কেন্দ্রবিন্দু ছিল হালখাতা। এটি ছিল একটি অর্থনৈতিক অনুষ্ঠান যেখানে ব্যবসায়ীরা পুরনো হিসাব সমাপ্ত করে নতুন খাতা খুলতেন। তারা নতুন ও পুরনো গ্রাহকদের মিষ্টি বিতরণ করে নতুন করে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করতেন। এই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানটি আজও অনুষ্ঠিত হয়।
১৫৫৬ সালে প্রবর্তিত বাংলা সন প্রথমে “ফসলি সন” নামে পরিচিত ছিল। পরে এটি “বঙ্গাব্দ” নামে পরিচিতি লাভ করে। যদিও বাংলাব্দের উৎপত্তি কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সাথে জড়িত, এর রাজনৈতিক ইতিহাসও রয়েছে। পাকিস্তান শাসনামলে, বাঙালি জাতীয়তাবাদের সাথে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ষাটের দশকের শেষভাগে, রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে এটি বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে।
ঢাকায়, ছায়ানটের উদ্যোগে সীমিত আকারে পহেলা বৈশাখ পালন শুরু হয়। স্বাধীনতার পর, এই উৎসব ধীরে ধীরে নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। পহেলা বৈশাখ বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার প্রকাশ ঘটায়। বর্তমানে, বর্ষবরণ শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক।
১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। এটি স্বৈরাচার ও অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে ওঠে। ২০১৬ সালে, ইউনেস্কো এই শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
জাগো/আরএইচএম