যশোরে সরে দাঁড়ালেন ৭ প্রার্থী, ছয়টি আসনেই নৌকার সামনে চ্যালেঞ্জ ৬ স্বতন্ত্র প্রার্থী

আরো পড়ুন

নিজস্ব প্রতিবেদক 
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরের ছয়টি সংসদীয় আসনে ৭ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ৫টি আসনে জাকের পার্টির তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আজ রোববার সংশ্লিষ্ঠ রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ আবরাউল হাসান মজুমদারের নিকট তারা মনোনয়ন প্রত্যাহারের আবেদন পত্র জমা দেন। পরবর্তীতে আবেদন যাচাই-বাছাই করে প্রার্থীতা বাতিল করেন রিটার্নিং অফিসার।

এদিকে, ছয়টি আসনেই প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেনি আওয়ামী লীগেরই ৬ স্বতন্ত্র হেভিওয়েট প্রার্থী। দলের মনোনয়ন পেয়ে এতোদিন ছিলেন ফুরফুরে মেজাজে। তারা ভেবেছিলেন, দলীয় চাপে এসব স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমার্থন দিবেন। কিন্তু প্রত্যাহারের শেষ দিনে তারা তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ভাবতে হচ্ছে নতুন করে। কারণ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে যারা রয়েছেন তাদের রয়েছে আলাদা নিজস্ব ভোট ব্যাংক। আছে শক্ত দলীয় পরিচয়। ভোটের মাঠে নৌকার প্রার্থীর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ তারা । আর নৌকার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের  শক্ত লড়াইয়ে খুশি ভোটারা।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা প্রার্থীরা হলেন, যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমজাদ হোসেন লাভলু ও হুমায়ন সাদাব। জাকের পার্টির যশোর-১(শার্শা) আসন সবুর খান, যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনে মোঃ সাফারুজ্জামান, যশোর-৩ (সদর) আসনের মোঃ মহিবুল ইসলাম, যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া) আসনের মোঃ লিটন মোল্লা, যশোর-৬(কেশবপুর) আসনের  সাইদুজ্জামান। এর আগে যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের জাকের পার্টির মোঃ হাবিবুর রহমান এর মনোনয়ন পত্র যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ায় অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এ বিষয়ে যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া) আসনের মোঃ লিটন মোল্লা বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তে যশোরে তাদের ৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করছেন। জাকের পার্টির জেলার সভাপতি ও সদর আসনের প্রার্থী মোঃ মহিবুল ইসলাম বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তে আমরা মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করছি। সকালে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রত্যাহারের আবেদন পত্র জমা দিয়ে রিসিভ কপি নিয়েছি। যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হুমায়ন সাদাব বলেন, ‌কোন চাপ না, দল থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার নিষেধাক্ষা না থাকাতে আমি প্রার্থী হয়েছিলাম। প্রার্থী হওয়ার পরে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া নিজের কাছে অস্বস্তিতে ছিলাম। তাই নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছি।

এদিকে, যশোরের ৬টি আসনে ‘স্বতন্ত্র’র মোড়কে নৌকার মুখোমুখি হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাই। প্রতিটি আসনেই নৌকার বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছেন একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জানিয়েছেন, ‘নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে হাইকমান্ডের নিদের্শনায় ভরসা পেয়ে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তারা। যদিও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মোড়কে এসব প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বলে নেতাকর্মীদের কাছে পরিচিতি পাচ্ছেন।

যশোর-১ (শার্শা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হলেন টানা তিন বারের সংসদ শেখ আফিল উদ্দিন। তার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনাপোল সাবেক পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন। সাধারণ ভোটারা বলছেন, এই আসনে বিভিন্ন দলের আরো তিন প্রার্থী হয়েছেন। তবে আফিল উদ্দিনের সঙ্গে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন লিটনের সঙ্গে। যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ডা. তৌহিদুজ্জামান তুহিন। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার জন্য প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম ও চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম হাবিবুর রহমান। এই আসনে ৪টি দলের প্রার্থী থাকলেও মূলত আওয়ামী লীগের প্রার্থী তুহিনের প্রধান প্রতিদ্বদ্বী হচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম। কারণ এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য অনেক আগে থেকেই মাঠে নেমেছিলেন মনিরুল।

যশোর-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের কাজী নাবিল আহমেদের প্রধান প্রতিদ্বদ্বী নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রাথী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ। কেননা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করা উপজেলার জ্যেষ্ঠ নেতার নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ মোহিত কুমার নাথেসঙ্গে রয়েছেন।

যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এনামুল হক বাবুল। তবে তার ঋণখেলাপীর অভিযোগে প্রার্থীতা অবৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সোমবার আদালতের মাধ্যমে এই আসনে ভাগ্য নিধারণ হবে এই প্রার্থীর। যদিও আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য রণজিত রায়। যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত স্বপন ভট্টাচার্য্যে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াকুব আলী। এই আসনে আরো দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে তারা প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ফলে এই আসনে নৌকার স্বপন ভট্টচার্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াকুব আলীর লড়াইয়ের আভাস মিলেছে।

যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে আওয়ামী লীগের শাহীন চাকলাদারের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এইচএম আমির হোসেন ও সদ্য জেলা পরিষদের পদত্যাগী সদস্য আজিজুল ইসলাম। এখানে নৌকার বিপক্ষে এইচএম আমির হোসেন শক্ত প্রতিদ্বদ্বী বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, ‌নেত্রীর নির্দেশ হলো প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে বিজয়ী হতে হবে। এখানে নৌকা হারলো না , স্বতন্ত্র হারলো এটা দেখার বিষয় না। জনগণ যাদের ভোট দিবে তারাই বিজয়ী হবে। দল যদি বলে স্বতন্ত্রের পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কাজ করলে কোন সমস্যা নাই। তাহলে আমরা যে যার পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবো।  প্রসঙ্গত, যশোরের ৬টি আসনে ৯টি দলের ৩১ জন প্রার্থী অংশ নিবেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র ৮ প্রার্থী রয়েছেন।

জেবি/জেএইচ 

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ