যশোরে ছুরি-চাকু মারার আতঙ্ক

আরো পড়ুন

নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে অবৈধ ছুরি-চাকুর ঝনঝনানি বেড়েছে। এতে আতংকে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। উঠতি বয়সের যুবক ও কিশোররা দেশিয় ও বার্মিজ চাকু দিয়ে অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের দেড় মাসে অন্তত অর্ধশতাধিক ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৮জন নিহত ও আহত ১৫ জন হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেওয়া তথ্যমতে এসব জানা গেছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যায় যশোরে জুম্মান (২৫) নামে এক যুবককে ছরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বুত্তরা। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শহরের শংকরপুর রেলস্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত জুম্মান শহরের শংকরপুর এলাকার মুরাদ হোসেনের ছেলে। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়। মরদেহ যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

নিহতের ভাই মামুন হোসেন জানান, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শহরের শংকরপুর রেলস্টেশন এলাকার স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতির অফিসের সামনে দুর্বুত্তরা জুম্মানকে ছরিকাঘাতে গুরুতর জখম করেন। স্থানীয়রা উদ্ধার রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ধারণা করা হচ্ছে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাকে প্রতিপক্ষের লোকজন কুপিয়ে হত্যা করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত জুম্মানের বিরুদ্ধে থানায় মাদক, ছিনতাই, চাঁদাবাজীসহ ১৫টির মতো মামলা রয়েছে।

গত সোমবার ভোরে যশোর শহরের সিটি কলেজপাড়ার বাসিন্দা বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য ইজিবাইক চালক সুশান্ত কুমারকে ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা। এসময় তার ইজিবাইকটিও ছিনিয়ে নেয়া হয়। বর্তমানে সুশান্ত কুমার যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ ঘটনায় কেউ আটক নেই। একই দিন রাত ১১টার দিকে শহরের মণিহার এলাকার আবাসিক হোটেল কোকোর নিচে পূর্ব বারান্দীপাড়া বাঁশতলা এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম নামে এক বিকাশ এজেন্টকে ছুরিকাঘাত করে ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় আহত রফিকুল ইসলামের ছেলে গালিব হাসান বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। আসামিরা হলেন- শহরের বারান্দী মোল্যাপাড়া জনির ছেলে বাঁধন, সিটি কলেজপাড়ার আবুল কাসেমের ছেলে আরাফাত হোসেন এবং সদর উপজেলার রামনগর-রাজারহাটের মাহিন।WhatsApp Image 2024 02 11 at 9.50.55 AM

এছাড়া সন্ধ্যা ৬টার দিকে শহরের নওয়াপাড়া ইউনিয়নের সালভেশন স্কুলের পাশে ঋষি পাড়ার সামনে ধারালো চাকু প্রদর্শন করে জনমনে আতংক সৃষ্টি করছিল শেখহাটি তমালতলার মফিজুর রহমানের ছেলে জয় এবং আক্কাস আলীর ছেলে হুমায়ুন কবীর। এই খবরে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি ধারালো চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় কোতোয়ালি থানার এসআই হুমায়ুন আহম্মদ ওই দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

একইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে যশোর শহরের রেল রোডস্থ ওরিয়েন্টাল সুপার সপের সামনে ধারালো চাকু প্রদর্শন করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালান কোতোয়ালি থানার এসআই শরিফুল ইসলাম। এসময় সেখান থেকে তিন দুর্বৃত্তকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি চাকু। আটককৃতরা হলো, শহরের নীলগঞ্জ তাঁতীপাড়ার ওয়াহেদ শরীফের ছেলে তামিম শরীফ, আরএন রোড মসজিদ গলির মিন্টুর ছেলে আব্দুর রহমান নেহাল এবং শহরতলীর ঝুমঝুমপুরস্থ্য বিজিবি ক্যাম্প রানী বাজার এলাকার আমির হোসেনের ছেলে সাকিব হোসেন।

সদর উপজেলার তপসীডাঙ্গা গ্রামের বাবু নামে এক ইজিবাইক চালককে এদিন রাত সাড়ে ৭টার দিকে ভাড়া করে চাঁচড়া গোলদারপাড়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছিল তিন দুর্বৃত্ত। গোলদারপাড়া কলোনীর সামনে পৌছানো মাত্র তারা চাকু দেখিয়ে বাবুর ইজিবাইক থামিয়ে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। এসময় বাবুর চিৎকারে টিপু নামে এক পথচারি সেখানে এগিয়ে আসে। দুর্বৃত্তরা বাবু ও টিপুকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে শহরের শংকরপুর গোলপাতা মসজিদ এলাকার শওকত হোসেন সপুর ছেলে বাপ্পি হোসেন, শংকরপুর পশ্চিমপাড়ার মৃত বেলায়েত হোসেন মোল্যার ছেলে সাদ্দাম হোসেন ওরফে সাগর এবং বাগেরহাটের চিতলমারি উপজেলার দলুয়াগুনি গ্রামের আসলাম খানকে গণপিটুনি দিয়ে আটক করে।

পরে তাদেরকে পুলিশের সোপর্দ করা হয়। এই ঘটনায় ইজিবাইক চালক বাবুর ভগ্নিপতি যশোর শহরের চাঁচড়া ডালমিল পশ্চিমপাড়ার আব্দুল মজিদ গাজী কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন।

এরআগে ৪ ফেব্রুয়ারি যশোরে পৃথক হামলায় পাঁচজন আহত হন। এরা হলেন- শহরতলীর ঝুমঝুমপুর বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা হামিদপুর আলহেরা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী তানভীর ইসলাম নাবির, সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের ফরিদপুর বাজার এলাকার শহর আলী চাকলাদার, শহরতলীর শেখহাটি তরফ নওয়াপাড়া জাহিদ হাসান, সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা গ্রামের সোহান মন্ডল ও মনিরামপুর উপজেলার চিনেটোলার বাঙ্গালীপুর গ্রামের মাহমুদ রানা।

এছাড়া গত ২৬ জানুয়ারি বিকেলে শহরের বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকায় সোলায়মান হোসেন নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনার মামলায় আরাফাত সিকদার নামে এক আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে।

এ বিষয়ে যশোর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেছেন, ছুরিকাঘাতের ঘটনা যেখানে ঘটেছে সেখানে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। বেশ কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে। পাশাপাশি ছুরি চাকু বন্ধে অভিযান চলছে।

জাগো/জেএইচ 

 

 

 

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ