বিনা শব্দে কাঁদে ৩ শ্রেণির মানুষ!

আরো পড়ুন

আক্তারুজ্জামান সুমন: বর্তমান সময়ের সবথেকে বড় আলোচনা চলছে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। বর্তমান সরকার তাদের এযাবৎকালের বাংলাদেশের সবথেকে বেশী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে এটা সত্য এখানে দ্বিতীয় কথা থাকতে পারে। আর তারা তাদের এই অবদানের কথা আমাদের স্বরণ করিয়ে সামনের নির্বাচনে আবার জয়ী হবার আশায় পথ চেয়ে বসে আছে। আর বিরোধী দলগুলো বর্তমান সরকারের করা দুর্নীতি অনিয়ম এবং সরকার যে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে সেটা আমাদের মনে করিয়ে দিয়ে তারা ক্ষমতায় আশার জন্য তাদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছে। কিন্তু এর ভিতর দরিদ্র, বেকার ও মাসিক মুজুরী ভিত্তক বেসরকারি কর্মচারী এই ৩ শ্রেণির মানুষের বোবা কান্না শোনার কেউ নেয়।

দরিদ্র: বর্তমানে দেশে মোট জনসংখ্যার কত শতাংশ নিন্মবিত্ত ও কত শতাংশ দরিদ্র সীমারেখার নিচে আছে তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো খবর নেয়।

২০২০ সালের ১০ মে এক ভার্চুয়ালি সেমিনারে উপস্থাপিত বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ গবেষণার ফলাফলে জানা যায়, করোনার কারণে দেশে নতুন করে ৩৫ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে। যা সংখ্যায় দাঁড়ায় প্রায় ৭ কোটির বেশি। যারা প্রতিদিন কাঁদছে। যে দেশের ৭ কোটি মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে থাকে তার ৭০ টাকা কেজি দরে চাল কিনবে কি করে৷ আর তরকারি অনন্য জিনিস তো দূরে থাক।

বেকার: দেশের অর্থনীতির সংজ্ঞা মোতাবেক বেকারত্ব ও দারিদ্র্য একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপে তরুণ-যুবাদের বয়সভিত্তিক বেকারত্বের হার থেকে দেখা যায়, বয়সসীমায় তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার দাঁড়ায় যথাক্রমে ১২ দশমিক ৭, ১২ দশমিক ১ এবং ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। গড় হার ১১ দশমিক ১ শতাংশে। আর শিক্ষার ভিত্তিতে উচ্চমাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা সম্পন্নকারী শিক্ষিত তরুণ-যুবাদের বেকারত্বের হার দাঁড়ায় যথাক্রমে ২২ দশমিক ৩ এবং ১৩ দশমিক ৪ শতাংশে। কর্মসংস্থান, শিক্ষা কিংবা প্রশিক্ষণ নেই এমন তরুণ-যুব জনগোষ্ঠীর বেকারত্বের হার ২৯ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপে দেশে কর্মক্ষম শ্রমশক্তির বেকারত্বের যে হার উঠে আসে, বিগত দুই বছরে করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাবে সে হারে বৃদ্ধি ঘটে। এই শ্রেণির মানুষ সবদিক দিয়ে উপযুক্ত হওয়ার পরও পথে পথে ঘুরছে। দেশে বেকারত্বের হার যে দিন দিন বেড়েই চলেছে সেটা সবার জানার কথা। আর এই বেকার শ্রেনীর মানুষগুলো সবথেকে যন্ত্রনা নিয়ে বেচে থাকছে। চাকরি না পেয়ে অনেকে ব্যবসার দিকে ঝুকে পড়ছে কিন্তু ব্যবসার পুজি শতকরা ৫/৬ জনের কাছে ধাকছে। বাকিরা প্রতিদিনই কাজ খুজে চলছে। আর অনেকে জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়ে আত্মহত্যা করছে, না হয় অবৈধ উপয়ে অর্থ উপার্জনের রাস্তুা বেছে নিচ্ছে।

কর্মজীবী: এবার আসি কর্মজীবী এক শ্রেণির মানুষের কথায়। কর্ম তারা পাইছে ঠিকিই কিন্তু এই কর্মই তাদের জীবনের সবথেকে বেশি বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে। পরিশ্রমের তুলনায় তাদের বেতন যা হচ্ছে সেটা দিয়ে দিনের টা দিনেই চালানো মুশকিল। তাদের ভবিষ্যৎ যেমন অন্ধকারে ছিলো ঠিক তেমনই থাকছে। কেননা হঠাৎ বিপদ আসলে তারা আবার জায়গায় ফিরে যাচ্ছে যেখানে কর্ম পাওয়ার আগে ছিলো। তার কারণ তাদের দিকে হাত বাড়ানোর কেউ থাকছে না। দেশে ৮ ঘণ্টার বেশি কাজের নিয়ম থাকলেও সেটার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি বিগত অনেক বছর ধরে। ৮ ঘণ্টার পর কাজের জন্য ওভার টাইম তার অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দেয়ার কথা থাকলেও সেটা এখন খাতা কলমে থাকে। আর কর্মজীবী শ্রেণির মানুষ এই যন্ত্রণা নিয়েই তাদের জীবন জীবিকা কোনো রকম টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। কেননা কর্মের তুলনায় কর্মজীবী দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রত্যেকটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপর নিশ্চুপ সীমাহীন অত্যাচার করে যাচ্ছে। যারা একটু প্রতিবাদী হয়ে উঠছে তখন তার যায়গায় খুব সহজেই প্রতিষ্ঠানগুলো অন্য কাউকে বসিয়ে দিচ্ছে কারণ এখন একটা চাকরির জন্য হাজার জন লাইনে দাড়িয়ে আছে।

আর এই শ্রেণির মানুষে ভিতর একাংশ কর্ম না পেয়ে অপরাধের পথ বেছে নিচ্ছে। যেটা ক্রমগত দেশকে অন্ধকারের মুখে নিয়ে যাচ্ছে।

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ