বরিশালের বাকেরগঞ্জে হঠাৎ করেই বেড়েছে জ্বর ও টাইফয়েডের প্রকোপ। এতে হাসপাতালগুলোতেও বেড়েছে রোগীর চাপ। হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তার-নার্সদের।
জানা গেছে, উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীর চাপ বেড়েছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ রোগীই চিকিৎসা নিতে আসছেন বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেড রয়েছে ৫০টি। কিন্তু টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত ওয়ার্ডে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। তাই হাসপাতালের বারান্দা এবং করিডোরের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাদের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, জুলাই মাসের শেষের দিক থেকেই বাড়তে থাকে টাইফয়েডের প্রকোপ। আবহাওয়ার তারতম্যের পাশাপাশি দূষিত পানি, অপরিচ্ছন্ন ও খোলা খাবার খাওয়ার কারণেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে বলে জানান চিকিৎসকরা। প্রতিদিনই অন্তত ১০ থেকে ১৫জন টাইফয়েডে আক্রান্ত শিশু ও বিভিন্ন বয়সের রোগীরা ছুটে আসছেন বাকেরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সাত, আট দিন চিকিৎসা নেয়ার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন তারা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আবদুর রহমান, সানজিদা আক্তার, জুলাহাস, জাহিদ, সাবিনা বেগম, জাওয়াত, রাকিবুল হাসান, চায়না দাস উপজেলার বিভিন্নস্থান থেকে আসে।
তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রায় সাতদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। হাসপাতালের বারান্দায় ফ্যানের ব্যবস্থা না থাকায় প্রচণ্ড গরমের মধ্যে গাদাগাদি করে সেবা নিতে হচ্ছে তাদের। সম্প্রতি এলাকার বেশিরভাগ শিশুই টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকেই বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছে বলেও জানান তারা।
হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স ফাতেমা বেগম জানান, প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ জনেরও বেশি নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী ভর্তি থাকছেন প্রতিদিন। রোগীদের করিডোর ও বারান্দার মেঝেতেও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধের ব্যবস্থা থাকলেও রোগীদের সঙ্গে আসা লোকজনের ভিড়ে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এ বছর সর্দি-কাশি তেমন না হলেও দীর্ঘমেয়াদী জ্বরের কারণে ওষুধ বিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
হাসপাতাল এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টাইফয়েড জ্বরে ওষুধের বিক্রি এখন বেশি। তাই বিভিন্ন কোম্পানিকে টাইফয়েডের ঔষধ বেশি বেশি করে অর্ডার দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শংকর প্রশাদ অধিকারী জানান, খোলা খাবার ও পানির কারণে এই রোগ হয়। এজন্য খাওয়ার আগে হাত সাবান দিয়ে ধুতে হবে। বাথরুম থেকে বের হয়ে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রয়োজনে পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। এছাড়াও টাইফয়েড হলে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরো জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। গত দুই সপ্তাহে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কয়েকদিনের মধ্যে এর প্রাদুর্ভাব কমে আসবে। তবে চিকিৎসার পাশাপাশি সবাইকে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।