নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার নায়েবে আমির গ্রেফতার

আরো পড়ুন

নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার নায়েবে আমির মো. মহিবুল্লাহ ওরফে ভোলার শায়েখকে (৪৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে সিটিটিসির ইনভেস্টিগেশন টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিন্যাল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। এসময় তার কাছ থেকে দুটি মোবাইল এবং একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান।

সিটিটিসি বলছে, গ্রেফতার শায়েখ মহিবুল্লাহ উগ্রবাদি জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আধ্যাত্মিক নেতার ভূমিকা পালন করছিলেন। বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলে তিনি ব্যাপক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন এবং ৫০-৬০ জন তরুণকে তিনি প্রশিক্ষণ দেন। প্রথমদিকে হিজরতকারীদের তিনিই আশ্রয়-বয়ান দিয়ে বিভ্রান্ত করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ঢাকা হয়ে পাহাড়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

আসাদুজ্জামান বলেন, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সিটিটিসির হাতে গ্রেফতার শুরা সদস্য ডা. শাকের ওরফর শিশির, পলাতক জঙ্গি নেতা শামিন মাহফুজসহ গ্রেফতার শায়েখ মহিবুল্লাহ বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে অবস্থিত জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দিস শারক্বীয়ার প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যান।

প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে কুকি-চিনদের বিদ্রোহী সংগঠন কেএনএফ (কুকি-চিন ন্যশানাল ফ্রন্ট)-এর তত্ত্বাবধানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ চলতো। সেখানে তাদের কেএনএফের প্রধান নাথান বম ও অন্যান্য কুকি-চিন নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে সংগঠনটির নামকরণ করা হয় এবং শুরা কমিটি গঠন করে। গ্রেফতার মহিববুল্লাহকে সংগঠনটির নায়েবে আমির হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।

সিটিটিসি প্রধানের দাবি, গ্রেফতার মহিববুল্লাহ ক্যাম্পে অবস্থানকালে সন্ধ্যার পর প্রশিক্ষণরত সদস্যদের বয়ান দিতেন। তার বয়ানের মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে জঙ্গি সদস্যদের জিহাদের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করা।

আসাদুজ্জামান বলেন, শায়েখ মহিববুল্লাহ পাহাড়ে কিছুদিন অবস্থান করার পর ঢাকায় চলে আসেন। তিনি শুরা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে এনক্রিপ্টেড চ্যাটের মাধ্যমে সমন্বয় করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দাওয়াতের মাধ্যমে সংগঠনের কার্যক্রম বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলে তিনি ব্যাপক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন এবং ৫০-৬০ জন তরুণকে প্রশিক্ষণ দেন।

তিনি আরও বলেন, শুরা সদস্য ডা শাকেরকে দাওয়াতি কার্যক্রমের বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য শায়েখ মহিববুল্লাহকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সংগঠনের শুরা পর্যায়ের একাধিক সদস্যের সঙ্গে ঢাকা, সিলেট ও কিশোরগঞ্জে সংগঠনের কার্যক্রম জোরদার করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি একাধিক বৈঠকে অংশ নেন। এছাড়া তিনি হাটহাজারীসহ বিভিন্ন মাদরাসায় বিভিন্ন সময়ে আসা-যাওয়া করতেন এবং সেখান থেকে পেনড্রাইভের মাধ্যমে বিভিন্ন জিহাদি ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে ল্যাপটপে সংরক্ষণ করতেন।

জিহাদ সংক্রান্ত বিষয়ে তার নিজস্ব লেখার খসড়া কপিও তার কাছে পাওয়া গেছে। ডা. শাকের সিটিটিসির হাতে গ্রেফতারের পর শায়েখ মহিববুল্লাহ নিজেকে আড়াল করতে তার ব্যবহৃত সিম ও মোবাইল ফোন নষ্ট করে ফেলেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার শায়েখ মহিবুল্লাহ জানান, তিনি উগ্রবাদি জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার নায়েবে আমির হিসেবে কথিত শুরা বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং তিনি ভোলার শায়েখ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রশিক্ষণক্যাম্পসহ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন শামীন মাহফুজ।

শায়েখ মহিববুল্লাহ চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আল জামেয়াতুল আহেলিয়া দারুল উলুম মইনূল ইসলাম মাদরাসার ছাত্র থাকাকালে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। তৎকালীন হুজির অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে তিনি বিভিন্ন মাদরাসায় কথিত জিহাদি ট্রেনিং গ্রহণ করেন।

আসাদুজ্জামান আরও বলেন, তৎকালীন হুজি নেতা মুফতি আব্দুর রউফ আফগানিস্তানসহ অন্যান্য জায়গায় জিহাদে যাওয়ার ব্যাপারে হাটহাজারী মাদরাসা ও আশপাশের এলাকায় নিয়মিত বক্তব্য প্রদান করতেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতিত মুসলিমদের সাহায্য করার জন্য সশস্ত্র জিহাদের ডাক দিতেন। সেসময় হুজির অন্যান্য জঙ্গি নেতার সঙ্গে শায়েখ মহিববুল্লাহ যুক্ত ছিলেন। পরে তিনি বিভিন্ন মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন।

প্রশাসনের নজরদারির কারণে হুজি-বি’র কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়ায় মহিববুল্লাহ তৎকালীন হুজির সদস্যদের নিয়ে নতুন একটি প্ল্যাটফর্মে জিহাদি কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা করেন। সেই লক্ষ্যে হুজির আরেক নেতা মাইনুল ইসলাম ওরফে রক্সি তার সঙ্গে ২০১৭ সালে ভোলাতে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। এসময় হুজির অন্যান্য নেতারাও তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়। এরপর থেকেই মাইনুল ইসলাম রক্সি ও মহিববুল্লাহর মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ শুরু হয়। ২০১১ সালে রক্সি গ্রেফতারের পর হুজির আরেকজন সদস্য রাকিবের সঙ্গে মহিববুল্লাহর যোগাযোগ তৈরি হয়। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনার কাজে সদস্য সংগ্রহ ও দাওয়াতি কার্যক্রম চালাতে থাকে।

এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, এই জঙ্গি সংগঠনের প্রধান ব্যত্তিত্ব শামীন মাহফুজ। তার নির্দেশে একটি কমিটি হয়। কমিটির প্রথম আমির ছিলেন রক্সি। রক্সি গ্রেফতারের পর আরেকজন আমির নিযুক্ত হন। শুরা কমিটির ছয়জন সদস্য ছিলেন। এর মধ্যে আনিসুল ইসলাম তমালকে নতুন আমির নিযুক্ত ও শায়েখ মহিবুল্লাহকে নায়েবে আমির নিযুক্ত করা হয়।

তিনি বলেন, রক্সিকে গ্রেফতারের সময় দায়ের করা মামলায় এজহারনামীয় আসামি ছিলেন র্যাবের হাতে গ্রেফতার রনবীর। তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার মাধ্যমে পলাতক শীর্ষ নেতাদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

শামীন মাহফুজ সম্পর্কে সিটিটিসি প্রধান বলেন, তিনি ডিবি পুলিশের হাতে একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। শামীন কুকি চিন প্রধান নাথাম বমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পাহাড়ি অঞ্চলে যাতায়াত ছিল শামীনের। নাথাম বমের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন শামীন। তিনি সপরিবারে নিখোঁজ। তার স্ত্রী এ সংগঠনে জড়িয়েছেন কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ