দাম বাড়ানোর পরেও ধান পাচ্ছে না যশোরের খাদ্য বিভাগ

আরো পড়ুন

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের সময় সংগ্রহের পরিমাণ বাড়াতে এবার ধানের দাম কেজিতে দুই টাকা বাড়িয়েছে সরকার। কিন্তু দাম বাড়ানোর পরেও ধান সংগ্রহের পরিমাণ বাড়েনি। বাজারে ধানের দাম বেশি থাকা ও গুদামে নানা ধরনের ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয় বলে গুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী হচ্ছেন না কৃষক। যশোরের বিভিন্ন গুদামে এখন পর্যন্ত মাত্র ৪১৮ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করেছে খাদ্য বিভাগ।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি আমন সংগ্রহ মৌসুমে যশোর জেলায় কৃষকের কাছ থেকে ৫ হাজার ২৮৩ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া জেলায় ১৪ হাজার ৮৭১ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে সেদ্ধ চাল ১৪ হাজার ৪৬৭ মেট্রিক টন এবং আতপ চাল ৪০৪ মেট্রিক টন। গত ২৩ নভেম্বর থেকে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি এ সংগ্রহ অভিযান শেষ হবে। সেদ্ধ চাল সরবরাহের জন্য ১০২ জন চালকল মালিক এবং আতপ চাল সরবরাহের জন্য একজন চালকলমালিক চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। সেদ্ধ চাল ৪৪ টাকা, আতপ চাল ৪৩ টাকা এবং ধান ৩০ টাকা কেজি দরে কেনা হচ্ছে। ১৪ শতাংশের নিচের আর্দ্রতার ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, কৃষকদের একটি করে কৃষি কার্ড আছে। ওই কার্ডে কৃষকের নাম, পরিচয় এবং তাঁর চাষ করা জমির পরিমাণ উল্লেখ রয়েছে। জেলায় কার্ডধারী কৃষকের ব্যাংকে ১০ টাকার হিসাব রয়েছে। ধান কেনার পর কৃষকের ব্যাংক হিসাবে টাকা দেওয়া হয়। কৃষক ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তোলেন।

সূত্র জানায়, একজন কৃষক সর্বনিম্ন ১২০ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ৩ মেট্রিক টন পর্যন্ত ধান সরকারি গুদামে বিক্রি করতে পারেন। ধান কেনার পর গুদাম থেকে কৃষককে ওজন মান মজুত সনদ দেওয়া হয়। কৃষক ওই সনদ ব্যাংকে তাঁর নিজস্ব ১০ টাকার হিসাবে জমা দিয়ে তাঁর হিসাব থেকে চেক দিয়ে ধান বিক্রির টাকা তোলেন।

জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে সদর, শার্শা, চৌগাছা, ঝিকরগাছা, মনিরামপুর, বাঘারপাড়া এবং কেশবপুর উপজেলায় কৃষি অ্যাপের মাধ্যমে এবং অভয়নগর উপজেলায় ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনা হচ্ছে। বর্তমানে জেলার হাটবাজারে মোটা ধান ১ হাজার ২৪০ টাকা থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা এবং চিকন ধান ১ হাজার ২৭০ টাকা থেকে ১ হাজার ২৮০ টাকা পর্যন্ত মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। গুদামে ধানের নির্ধারিত দাম ১ হাজার ২০০ টাকা মণ। গত বুধবার পর্যন্ত জেলার খাদ্যগুদামগুলোতে মাত্র ৪১৮ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। এ সময় সেদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে ১২ হাজার ২৪০ মেট্রিক টন। তবে কোনো আতপ চাল সংগৃহীত হয়নি।

দাম বাড়িয়েও ধান সংগ্রহ আশানুরূপ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুণ্ডু বলেন, আমন সংগ্রহ অভিযানে সরকারিভাবে ধানের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তার চেয়ে বেশি দামে ধান বেচাকেনা হচ্ছে। সংগ্রহ অভিযানের শুরুতে বাজারে ধানের দাম কম ছিল। তখন কিছু ধান সংগ্রহ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, খাদ্যগুদামগুলো উপজেলা সদরে হওয়ায় ধান পরিবহনে কৃষকের ব্যয় বাড়ে। শ্রম ও সময়ও বেশি লাগে। এ জন্য কৃষক বাড়ি থেকে এবং পাশের বাজারে প্রায় একই দামে ধান বিক্রি করছেন। তাঁর পরিবহন ব্যয়, শ্রম ও সময় কম লাগছে। এ কারণে কৃষক খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। সামনে যে সময় আছে, তাতে আর ধান সংগ্রহ করা যাবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে চুক্তিবদ্ধ চালকলের মালিকেরা ঠিকমতো চাল সরবরাহ করছেন। লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ চাল সংগৃহীত হবে।

গুদামে ধান দিতে গেলে কৃষকদের নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। এই বিষয়ে কয়েকজন কৃষক বলেন, কৃষক গুদামে ধান নিয়ে গেলে ওই কৃষকের নাম উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের কৃষকের তালিকায় আছে কি না, তা দেখা হয়। তালিকায় নাম না থাকলে কৃষক গুদামে ধান বিক্রি করতে পারেন না। ২০১০ সালে কৃষি বিভাগ কৃষকদের তালিকা তৈরি করে। এরপর তালিকাভুক্ত কৃষকদের কৃষিকার্ড দেওয়া হয়। কিন্তু তালিকাটি পরে আর হালনাগাদ করা হয়নি। ফলে নতুন করে ধান চাষ করা কৃষক তালিকাভুক্ত হননি।

খাদ্যগুদামে শুধু ১৪ শতাংশের নিচের আর্দ্রতার ধান কেনা হয়। বাজার থেকে গুদামে ধানের দাম বেশি থাকলে কৃষক গুদামে ধান নিয়ে গেলে আর্দ্রতার অজুহাতে কৃষকের ধান না কিনে ফেরত দেওয়া হয়। এ কারণে গুদামে ধান দিতে গিয়ে কৃষকের লোকসান হয়। এ ছাড়া ধানের মান খুব ভালো না হলে খাদ্যগুদামে ধান কেনা হয় না। তবে ধানের মান কিছুটা খারাপ হলেও কৃষক বাজারে যাচাই করে ধান বিক্রি করতে পারেন।

গুদামে ধান সরবরাহ না করার কারণ জানতে চাইলে কয়েকজন কৃষক বলেন, গুদামে ধান বিক্রি করা বেশ ঝামেলার। তা ছাড়া মোটা এবং চিকন ধানের বাজারদর সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি। গুদামে ধান পৌঁছে দিতে পরিবহন খরচ বেশি পড়ে, শ্রমও ব্যয় হয় বেশি। এ জন্য কৃষকেরা গুদামে ধান বিক্রি করতে চান না।
যশোরের অভয়নগর উপজেলার বগুড়াতলা গ্রামের কৃষক শেখ নূর আলম বলেন, ‘সরকারি গুদামে ধান দিতে খুব ঝামেলা হয়। বাড়ি এবং স্থানীয় বাজারে ধান বিক্রিতে কোনো ঝামেলা নেই। দামও ভালো। এ জন্য গুদামে ধান বিক্রি করিনি।’

জাগো/জেএইচ 

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ