ছেলে ও ভাগ্নের কারণে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের পরাজয়!

আরো পড়ুন

নিজস্ব প্রতিবেদক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম ইয়াকুব আলীর কাছে ৫ হাজার ১৩৬ ভোটে হেরে গেছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য। আওয়ামী লীগের এ প্রার্থী নৌকায় পেয়েছেন ৭২ হাজার ৩৩২ ভোট। বিপরীতে ঈগল প্রতীকে ৭৭ হাজার ৪৬৮ ভোট পেয়েছেন জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি ইয়াকুব আলী। প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যের হার নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।

এলাকার বাসিন্দা ও দলের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁর পরাজয়ের পেছনে তিনটি কারণ প্রধান ভূমিকা রেখেছে। এগুলো হলো– বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগ ও ঘুষ-বাণিজ্য, ছেলে-ভাগনের নেতৃত্বাধীন কথিত সিন্ডিকেটের নানা অপকর্ম এবং দলের ভেতর স্বপন ভট্টাচার্য্যের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী খান টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন স্বপন ভট্টাচার্য্য। এর মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক উত্থান হয়। এবার নৌকার প্রার্থী হয়ে একই দলের নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াকুব আলীর কাছে হেরে তাঁর রাজনৈতিক পতন হলো বলে স্থানীয় রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাষ্য।

স্বপন ভট্টাচার্য্য জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ। ২০০৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে চেয়ারম্যান জয়ী হন। সে সময় তাঁর ভাবমূর্তি ছিল পরিচ্ছন্ন। ফলে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে যান দ্রুত। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল এ আসনে বীর মুক্তিযোদ্ধা খান টিপু সুলতানকে মনোনয়ন দেয়। বিদ্রোহী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়ী হন স্বপন ভট্টাচার্য্য। এ জন্য তাঁকে দল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ২০১৭ সালে খান টিপু সুলতানের মৃত্যুর পর স্বপন ভট্টাচার্যের বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পান। প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পরে এমপি ও তার পরিবারের স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি-অনিয়ম এবং দলের নিবেদিত প্রাণদের ওপর নিপীড়নের কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ স্বপন ভট্টাচার্যের সঙ্গে নেই। তার ভাগনে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু ত্রাণের চাল চুরির অভিযোগে কারাগারেও গেছেন। ভবদহ অঞ্চলের নদী খননে তার ছেলের কাজ পাওয়া এবং সেই কাজে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের ব্যাপারে সংসদ সদস্যের অবস্থান নিয়েও রয়েছে বিভিন্ন আলোচনা। নব্য আওয়ামী লীগারের কারণে মণিরামপুরে ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। তারা এখনো আদালতের বারান্দায় ঘুরে বেড়ান। পাশাপাশি এই আসনে সংখ্যালঘু ভোটার সবচেয়ে বেশি। সেখানে মন্দিরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া নিয়ে সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনও হয়েছে। এ জন্য তারা নৌকার প্রার্থী হওয়া সত্বেও প্রতিমন্ত্রী স্বপন বিজয়ী হতে পারেনি। ২০০৯ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরও জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিলেন স্বপন ভট্টাচার্য্য। তবে প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই ভাটা নামে। দলের নেতাদের ভাষ্য।

অনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য স্বপন ভট্টাচার্য্য প্রতি ইউনিয়নে অযোগ্য ও সুযোগসন্ধানী লোক পুষেছেন বলে মন্তব্য করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মিকাইল হোসেন। প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দলের ভেতর বলয় সৃষ্টির অভিযোগ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন। তাঁর ভাষ্য, দলের কর্তৃত্ব নিতে তিনি (স্বপন ভট্টাচার্য্য) ত্যাগী নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রীর ছেলে সুপ্রিয় ভট্টাচার্য্য শুভ ও ভাগনে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চুর নেতৃত্বে প্রতি এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে অপকর্মের সিন্ডিকেট। এদের মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব বজায় রেখেছেন। এসব অপকর্মের কারণে দলের কর্মী-সমর্থক ছাড়াও সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। ফলে তাঁর কাছ থেকে সবাই এবার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। স্বপনের অনুসারী হিসাবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ কাজী মাহমুদুল হাসান বলেন, দলের অভ্যন্তরীণ রেষারেষির কারণে এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

সংসদ সদস্য পদে জয়ী কৃষক লীগ নেতা এসএম ইয়াকুব আলীর ভাষ্য, মনিরামপুরের জনগণ সন্ত্রাস, অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। তাদের রায়েই তাঁর জয় এসেছে।

জাগো/জেএইচ 

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ