চাঁদা ও হয়রানি ছাড়াই পদ্মা সেতু দিয়ে আসছে কোরবানির পশু

আরো পড়ুন

১৫ বছর ধরে শরীয়তপুরের বিভিন্ন হাট ও খামার থেকে গবাদিপশু কিনে ঢাকায় বিক্রি করেন চান মিয়া সরদার। ফেরিঘাটে যানজট, হয়রানি ও চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে তিন বছর ধরে ট্রলারে ঢাকায় গরু নিয়ে যেতেন। সেই পথেও ঢাকায় যেতে অন্তত পাঁচ স্থানে চাঁদা দিতে হতো।

তবে এসব ভোগান্তির হাত থেকে মুক্তি মিলেছে শরীয়তপুর সদর উপজেলার সুবচনি এলাকার ওই গরু ব্যবসায়ী চান মিয়ার। তিনি বলেন, এ বছরই প্রথম চাঁদা ও হয়রানি ছাড়া গরু নিয়ে ঢাকায় পৌঁছেছি। পদ্মা সেতু আমাদের অনেক বড় সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।

বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় গরু নিয়ে যেতে তার সময় ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। কমেছে দুর্ভোগ। দিতে হচ্ছে না চাঁদা।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, শরীয়তপুর জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১২ হাজার ৪০০টি খামার রয়েছে, যেগুলোয় অন্তত ৫৫ হাজার গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ছোট-বড়, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে অন্তত ৩৫টি গরুর হাট বসে। শরীয়তপুরের খামারিদের গরু ছাড়াও মাদারীপুর, বরিশাল ও চাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকার খামারিরা ওই হাটগুলোয় গরু বিক্রি করেন। হাটগুলো থেকে পাইকাররা গরু কিনে ঢাকার কোরবানির পশুর হাটে বিক্রি করেন।

গোসাইরহাটের নলমুরির বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন গতকাল বুধবার একটি পিকআপ ভ্যানে চারটি গরু নিয়ে ঢাকার দনিয়া কলেজ মাঠে অবস্থিত কোরবানির পশুর হাটের দিকে রওনা হন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর একেকটি গরু ঢাকায় পৌঁছাতে অন্তত ১২ হাজার টাকা খরচ হতো। এর সিংহভাগ যেত বিভিন্ন স্থানে চাঁদা বাবদ। এ বছর দুই ট্রিপে ৬টি গরু ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করেছেন। এর একেকটি ঢাকায় পৌঁছাতে খরচ হয়েছে ৩ হাজার টাকা। এটা সম্ভব হয়েছে পদ্মা সেতুর কারণে।

নড়িয়ার নশাসন এলাকার গরু ব্যবসায়ী মেজবাউদ্দিন বলেন, ঈদের মুহূর্তে ফেরিঘাটে দু-তিন দিন অপেক্ষা করে পদ্মা নদী পার হওয়ার সিরিয়াল পেতে হতো। তখন নানা ধরনের ভোগান্তি, পুলিশ, বিআইডব্লিটিসিসহ স্থানীয় বিভিন্ন সিন্ডেকেটকে চাঁদা দিতে হতো। আর এ বছর চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। শরীয়তপুর থেকে গরুবোঝাই গাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পর পদ্মা সেতুর টোল দিয়ে একটানে যাত্রাবাড়ী। রাস্তায় কেউ গাড়ি থামায় না। কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। কোনো চাঁদা ও হয়রানি ছাড়াই কোরবানির পশুর হাটে যেতে পারছেন। পদ্মা সেতু জীবনে আর্শীবাদ হয়ে এসেছে।

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার এস এম আশ্রাফুজ্জামান বলেন, পদ্মা নদী এ অঞ্চলের যোগাযোগে বিরাট প্রতিবন্ধকতা ছিল। ফেরিঘাটগুলোয় নানা ধরনের চাঁদাবাজ চক্র সক্রিয় ছিল। কোরবানির পশুবোঝাই গাড়ি থেকে বিভিন্ন স্থানে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যেত। এ বছর পদ্মা সেতু পেরিয়ে পশুবোঝাই গাড়িসহ যানবাহন পারাপার হচ্ছ। কোথাও কোনো হয়রানি, চাঁদাবাজি ও প্রতিবন্ধকতা নেই। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে পুলিশের টহল দল সড়কে কাজ করছে।

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ