আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যশোরের ৬টি আসনেই বেড়ে গেছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তোড়জোড়। নৌকার মাঝি হতে মাঠে প্রচারণা শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের তিন ডজনেরও বেশি নেতা। নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কথা বলে আন্দোলনের মধ্যে থাকলেও ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ২০ নেতা। এর বাইরে দৌড়-ঝাঁপে পিছিয়ে নেই অন্যান্য দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও।
এর মধ্যে জাতীয় পার্টির ৪ নেতা, নিবন্ধন না থাকা জামায়াতে ইসলামীর এক নেতা ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) এক নেতাকে প্রার্থী হওয়ার প্রচারণা চালাতে দেখা যাচ্ছে। তবে মাঠে সবচেয়ে কৌশলী প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা সরকারের উন্নয়ন, দলে নিজেদের ও পরিবারের অবস্থান ও অতীত এবং বর্তমান কৃতকর্ম তুলে ধরছেন। আর বিএনপি নেতারা মনোনয়ন পেতে ঘর গোছানোসহ সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচিতে অধিকসংখ্যক সমর্থক নিয়ে উপস্থিতিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
যশোর-১ (শার্শা)
ভারত সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলা নিয়ে যশোর-১ আসন গঠিত। এ উপজেলায় আছে ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা। দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোলও এখানে। দেশের শিল্প-কলকারখানার জন্য অপরিহার্য কাঁচামালের বড় একটি অংশ আমদানি হয়ে থাকে এ বন্দর দিয়ে। তাছাড়া সরকার এ বন্দর থেকে বছরে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। ফলে এ আসনটি বড় সব দলের টার্গেট।
বিগত ১১টি সংসদ নির্বাচনে সর্বাধিক ৬ বার বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। আর বিএনপির প্রার্থীরা ৩ বার, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত প্রার্থী একবার করে বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে গত ৬টি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা ৫ বার জয়ী হয়েছেন।
প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনগুলোতে প্রধান এ দুই দলের প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের চিত্র দেখা গেছে। সব দল নির্বাচনে থাকলে আগামী সংসদ নির্বাচনেও প্রধান এ দুই দলের প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে।
পরপর তিনবারের সংসদ সদস্য দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ আকিজ পরিবারের সন্তান শেখ আফিল উদ্দিন চতুর্থবারের মতো এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন। শেখ আফিল উদ্দিন তৃণমূল পর্যায়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। আবার দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য থাকায় দলের মধ্যে কিছু বিভক্তিও তৈরি হয়েছে।
বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন গেল নির্বাচনেও দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন।
এছাড়া যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নাজমুল হাসান ও জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুজিব উদ্দৌলা সরদার কনক দলীয় মনোনয়ন লাভে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এদিকে, বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে দলটির সাবেক কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি রয়েছেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় বিতর্কিত কিছু ভূমিকার কারণে বহিষ্কৃতও হয়েছিলেন। পরে আবার দলে ফিরেছেন। দলের মধ্যে তাকে নিয়ে সমালোচনাও আছে। তারপরও গেল নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।
পাশাপাশি শার্শা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুজ্জামান মধু ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসান জহিরও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী।
অন্যদিকে এ আসনে গত নির্বাচনে জাকের পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একজন করে প্রার্থী ছিলেন। তবে এবার এ দু-দল থেকে এখনও সম্ভাব্য কোনো প্রার্থীর তৎপরতা চোখে পড়েনি।
যশোর-২ (ঝিকরগাছা ও চৌগাছা)
গেল নির্বাচনের মতো এবারও যশোর-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। দলের মধ্যেও রয়েছে বিভক্তি।
অন্যদিকে, বিএনপিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকা ছোট। তাছাড়া তাদের জোটগত শরিক জামায়াতকে নিয়েও দুশ্চিন্তা কমেছে এ আসনে।
যশোরের ভারত সীমান্তবর্তী ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলা নিয়ে যশোর-২ আসন। এ দুই উপজেলায় ১১টি করে মোট ২২টি ইউনিয়ন রয়েছে। আছে দুটি পৌরসভা। গত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ ৬ বার, বিএনপি ও জামায়াত ২বার করে এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী একবার জয়ী হয়েছেন।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে নৌকার টিকিট পেতে প্রায় এক ডজন নেতা জনসংযোগ করে যাচ্ছেন।
বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) ডা. নাসির উদ্দিন এবারও দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। সাবেক বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং এই আসন থেকে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া অধ্যাপক রফিকুল ইসলামও এবার দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। তাঁর ছেলে মোস্তফা আশীষ ইসলামও মনোনয়ন পেতে দুই উপজেলার তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।
সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল ইসলামও এলাকায় গণসংযোগে আছেন।
এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলী রায়হান, এবিএম আহসানুল হক আহসান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ হারুণ-অর রশিদ, চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম হাবিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আনোয়ার হোসেন ও গিলবার্ট নির্মল বিশ্বাস নৌকার টিকিট পেতে এলাকায় গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন পেতে দীর্ঘদিন ধরে এ দুই উপজেলায় কাজ করে যাচ্ছেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান।
মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ঝিকরগাছার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা নাজমুল মুন্নি, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মুনিরুল হুদা, বিএনপি নেতা যশোর আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ইসহক, চৌগাছা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম ও ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোর্তজা এলাহী টিপু।
সবশেষ চারটি নির্বাচনের তিনটিতেই (২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি) বিএনপি এ আসনটি জোট শরীক জামায়াতকে ছেড়ে দিয়েছিল। তবে এবার তাদের নিবন্ধন নেই। তাছাড়া জামায়াতের নেতার মৃত্যুর কারণে বিএনপি নেতারা এবার আশায় বুক বাঁধছেন। এ আসন থেকে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক অন্যান্য দলের নেতাদের এখনও গণসংযোগে দেখা যায়নি।
যশোর-৩ (সদর)
বরাবরই যশোর-৩ (সদর) আসনটি হেভিওয়েট প্রার্থীদের। এ আসনটিতে একসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া খালেদুর রহমান টিটো, আলী রেজা রাজুর মতো ডাকসাইটে নেতারা প্রার্থী হতেন। সময়ের পরিক্রমায় এ তিন নেতার কেউই আজ আর বেঁচে নেই। ফলে গত সংসদ নির্বাচনে প্রধান দুই দল থেকে যারা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন, এবারও তারাই মনোনয়ন পাবেন – এটা অনেকটা নিশ্চিত।
তারপরও এ আসনে আওয়ামী লীগের কমপক্ষে ৫ জন নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী। তার বিপরীতে বিএনপির রয়েছে একক প্রার্থী। গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটিতে ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদ ও একটি পৌরসভা রয়েছে। বিগত ১১ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ ৬ বার, বিএনপি ৩ বার এবং জাতীয় পার্টি ও জাসদ একবার করে নির্বাচিত হয়।
গত দুটি সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দুবারই নৌকার টিকিট পান কাজী নাবিল আহমেদ।
পরে ২০২০ সালে জানুয়ারিতে যশোর-৬ আসনটি শূন্য হলে সেখানকার উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তবে এবার তিনি যশোর-৩ ও যশোর-৬ দু-আসনেই মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে।
এ দুজনের বাইরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুও মনোনয়ন পেতে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন যশোর-৩ সদর আসনে তিনি একক প্রার্থী ছিলেন। গত সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি ইন্তেকাল করলে এ আসনে দলের টিকিট পান তার ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমিত এরই মধ্যে দলে শক্ত ভিতের ওপর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যশোর বিএনপিকেও করেছেন ঐক্যবদ্ধ। পিতার মতো তিনিও যশোর-৩ আসনে এখন একক প্রার্থী। এর বাইরে অন্যান্য দল থেকেও এ আসনে প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেন। তবে এখনো তাদের তৎপরতা তেমন চোখে পড়েনি।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া, অভয়নগর ও সদরের একাংশ)
যশোরের অভয়নগর ও বাঘারপাড়া উপজেলা এবং সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে যশোর-৪ আসন।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যশোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ১৩ প্রার্থী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এর মধ্যে সর্বাধিক ৯ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগে। টানা তিনবারের এমপির পরিবর্তন চায় এ দলের নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে, বিএনপির ৩ এবং জাতীয় পার্টির এক নেতা রয়েছেন নির্বাচনী মাঠে।
এ আসনে বিগত ১১টি নির্বাচনের মধ্যে ৭ বার বিজয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বিজয়ী হয়েছে ২ বার করে। এ আসনে টানা তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রণজিৎ কুমার রায়। দুই উপজেলার অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতার সাথেই তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়েছে। চতুর্থবারের মতো নৌকার টিকিট পাওয়া তার জন্য কঠিন হয়ে যাবে বলে অনেকেই মনে করছেন। কারণ এরই মধ্যে দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের এক ঝাঁক নেতা মাঠে নেমেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে।
দলে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য গ্রুপ। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি আলাদা আলাদাভাবে পালন করে জনসমর্থনের প্রমাণ দিচ্ছেন তারা। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল কবির বিপুল ফারাজী। দলীয় কেন্দ্রীয় কর্মসূচিগুলোতে বাঘারপাড়ায় বড় বড় শোডাউন করে আলোচনায় এসেছেন তিনি।বিভিন্নভাবে গণসংযোগ করে চলেছেন যশোর মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার, সাবেক হুইপ অধ্যক্ষ শেখ আবদুল ওহাব, অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নওয়াপাড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র এনামুল হক বাবুল, সাধারণ সম্পাদক সরদার অলিয়ার রহমান, অভয়নগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীর, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব সন্তোষ অধিকারী ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা আরশাদ পারভেজ।
এদিকে, গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইউব। এলাকায় তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। এবারও তিনিই মনোনয়ন পাবেন বলে স্থানীয় বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মী মনে করছেন। তিনি ছাড়াও এবার এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপর রয়েছেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য ফারাজী মতিয়ার রহমান ও বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাই মনা। এছাড়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও দলের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক নেতা জহুরুল হক জহিরও নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় আছেন।
যশোর-৫ (মণিরামপুর)
আগামী নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশী যশোর-৫ আসনে। এ আসনে চার দলের ১৮জন প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এর মধ্যে বর্তমান স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যসহ ১১ জনই আওয়ামী লীগের। আর বিএনপির রয়েছে ৪ জন। এছাড়া জাতীয় পার্টির ২ জন ও জাগপার একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা মণিরামপুর নিয়ে যশোর-৫ সংসদীয় আসন। ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসনের ভোটারদের বড় একটি অংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। এখানে জামায়াতেরও বড় একটি ভোটব্যাংক আছে। সংসদ নির্বাচন কিংবা উপজেলা, ভোটারদের এ দুটি অংশ সব নির্বাচনেই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যেই হবে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে যে বিভক্তি রয়েছে তা আগামী নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে বেশ ভোগাতে পারে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিভক্তি কাজে লাগানোর জন্য মুখিয়ে আছে বিএনপি।
এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য আবারও দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল মজিদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এসএম ইয়াকুব আলী, আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল হাসান বারী, সাবেক সংসদ সদস্য (মরহুম) খান টিপু সুলতানের স্ত্রী জেসমিন আরা ও পুত্র জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য হুমায়ুন সুলতান, জেলা যুবলীগের সভাপতি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, মণিরামপুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, তার ছেলে বাবলু ভট্টাচার্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন মনোনয়ন প্রত্যাশী।
অন্যদিকে, বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় আছেন মণিরামপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ মোহাম্মদ ইকবাল, যশোর নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুনীর আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, মণিরামপুরের সাবেক মেয়র ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মুছা ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখার সেলিম অগ্নি।
প্রধান দুই দলের বাইরে জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি শরিফুল ইসলাম সরু চৌধুরী, মণিরামপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এমএ হালিম এবং জাগপার সভাপতি নিজামউদ্দিন অমিতও প্রার্থী চান এ আসন থেকে।
যশোর-৬ (কেশবপুর)
যশোর জেলার দক্ষিণ প্রান্তের উপজেলা কেশবপুর। এই উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসন। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা নিয়ে একেবারে ভিন্ন চিত্র যশোর-৬ আসনে। এ আসনে প্রধান চারটি রাজনৈতিক দলেরই প্রার্থীরা মাঠে রয়েছেন এবং তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও কম। এ আসনে আওয়ামী লীগের মাত্র ২ জন, বিএনপির ৩ জন, জামায়াতে ইসলামীর একজন ও জাতীয় পার্টির একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী সভা, সমাবেশ ও গণসংযোগের মাধ্যমে নির্বাচনে প্রার্থী হবার জানান দিচ্ছেন।
এখানে আওয়ামী লীগের যেমন বিপুল ভোট রয়েছে। তেমনি বিএনপি-জামায়াতের ভোটসংখ্যাও কম নয়। ফলে নির্বাচনে দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে আওয়ামী লীগকে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার ও কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগে সহসভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আমীর হোসেন।২০১৮ সালের নির্বাচনে টানা দ্বিতীয় বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক। ২০২০ সালে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। এরপর উপ-নির্বাচনে দল নৌকা প্রতীক তুলে দেয় দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের হাতে। জয়লাভের পর তিনি এ এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রেখে চলেছেন। পাশাপাশি তিনি যশোর-৩ সদর আসনেরও মনোনয়নপ্রত্যাশী। যদি তিনি যশোর-৩ আসনের মনোনয়ন পান, তাহলে এ আসনে আওয়ামী লীগের একক মনোনয়ন প্রত্যাশী হবেন এইচ এম আমীর হোসেন।
এদিকে, বিএনপি থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ, কেশবপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুস সামাদ বিশ্বাস ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু। এছাড়াও মাঠে রয়েছেন উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মোক্তার আলী এবং জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব।
এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে নতুন কমিটি গঠনসহ নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। উপজেলা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠন করছে। পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠন নিয়েও কেশবপুরের রাজনীতিতে উত্তাপ রয়েছে।