ইয়োশেভেদ লিফশিৎজ, বয়স ৮৫ বছর। গত ৭ অক্টোবর গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিন প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস যোদ্ধাদের হাতে বন্দি হয়েছিলেন তিনি। সোমবার রাতে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু মুক্তির পর লিফশিৎজ হামাসের আচরণের যে বর্ণনা দিয়েছেন তাতে বিপাকে পড়েছে ইসরায়েল সরকার। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ‘হারেৎজ’ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিফশিৎজ যে বক্তব্য দিয়েছে যে, তাকে ‘বন্দি থাকা অবস্থায় হামাস তাকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে এবং তার সঙ্গে ভাল আচরণ করেছে।
তার এই বক্তব্যে পর ইসরায়েলি কর্মকর্তারা চিন্তায় পড়ে গেছেন।
তাদের মতে, লিফশিৎজের এই বক্তব্য অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির ব্যাপারে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
মুক্তির পর লিফশিৎজ মঙ্গলবার তেল আবিবে সংবাদ সম্মলনে জানান, ইসরায়েলের কিবুৎজ এলাকা থেকে তাকে আটক করেন হামাস যোদ্ধারা। পরে তাকে মোটরসাইকেলে করে গাজায় নেওয়া হয়। এ সময় তার শরীরে বেশ কয়েক জায়গায় আঘাত লাগে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল তার।
তিনি আরো বলেন, ইসরায়েল সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে গাজা সীমান্তে বেড়া তৈরি করেছে। কিন্তু তা হামাস যোদ্ধাদের ইসরায়েলে প্রবেশ ঠেকাতে পারেনি।
লিফশিৎজ বলেন, যখন তাকে গাজায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন তার ঘড়ি ও গয়নাগুলো নিয়ে নেন হামাস সদস্যরা। গাজায় মোটরসাইকেল থেকে নামার পর তাকে নিতে আসা লোকজন বলেছিলেন- আমরা পবিত্র কোরআনে বিশ্বাস করি। আমরা আপনাকে আঘাত করবো না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সুড়ঙ্গের ভেতরে লিফশিৎজকে যেখানে রাখা হয়েছিল, স্থানটি পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন ছিল। তাদের মাদুর (ম্যাট্রেস) পেতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রতি দুই–তিন দিনে একজন চিকিৎসক এসে সবাইকে দেখে যেতেন। প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হতো। একজন জিম্মিকে গাজায় নিয়ে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন। তাকেও চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
লিফশিৎজ জানান, প্রতি পাঁচজন জিম্মির জন্য একজন নিরাপত্তারক্ষীর ব্যবস্থা রেখেছে হামাস। জিম্মিদের ‘খুঁটিনাটি বিষয়ে’ খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে জানাশোনা আছে এমন নারীদেরও সেখানে দায়িত্বে রেখেছে হামাস।
জিম্মি থাকার সময় তাদের পনির (চিজ) ও শসা খেতে দেওয়া হয়েছিল বলে জানান লিফশিৎজ। তিনি বলেন, একই খাবার হামাস সদস্যরাও খেয়েছেন।
উল্লেখ্য, সোমবার লিফশিৎজ ছাড়াও নুরিত কুপার (৭৯) নামের আরও এক ইসরায়েলি নারীকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। এর আগে আরো দুই মার্কিন জিম্মিকে মুক্তি দেয় গোষ্ঠীটি।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। ইসরায়েল বলছে, হামাসের কাছে এখনো দুই শতাধিক জিম্মি রয়েছে।
সূত্র: হারেৎজ