একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে ২০১০ সালের মার্চে যাত্রা শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের এ ১৩ বছরে রায় হয়েছে ৫৩ মামলার। সাজা হয়েছে ১৩৯ আসামির। তাদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড হয় ৯৯ আসামির। আমৃত্যু কারাদণ্ড পেয়েছেন ২৫ জন। এছাড়া যাবজ্জীন সাজা হয়েছে ৯ জনের। সশ্রম কারাদণ্ড রয়েছে ৬ জনের।
ট্রাইব্যুনালে রায়ের পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি শেষে আব্দুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, মতিউর রহমান নিজামী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ এবং মীর কাশেম আলী- এ ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। বর্তমানে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে আরও ৪৩টি আবেদন। সবশেষ ২০১৭ সালে নিষ্পত্তি হয় জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা। এরপর গত ৬ বছরে আর কোনো মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। গত চার বছরে আপিল বিভাগে মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় শুনানিও হয়নি।
এ নিয়ে প্রসিকিউশন বলছে, আমরা মনে করি আপিলগুলো নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। প্রয়োজনে প্রসিকিউটররা সহযোগিতা করবেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলছেন, শুনানির উদ্যোগ নিচ্ছেন। আপিলগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিচ্ছেন। শুনানিও করতে চান।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মৃত্যুদণ্ড নিয়ে কারাগারে রয়েছেন ৫৩ জন আসামি। পলাতক রয়েছেন ৪৬ জন। এছাড়া আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ১২ জন। আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ আসামি কারাগারে রয়েছেন। যাবজ্জীবন দণ্ড আছে ৯ জনের।
প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, বিচারে রায়ের আগে কারাগার-হাসপাতালে মারা যান ১৬ জন। এছাড়া রায়ের আগেই পলাতক অবস্থায় মারা যান ২ জন আসামি। শিশু বিবেচনায় একজন এবং অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় অপর একজনকে খালাস দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশন শাখার তথ্য মতে, ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত ৫৩ রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন মোট ১৩৯ জন আসামি। এরমধ্যে মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে ৯৯ জনের বিরুদ্ধে। আমৃত্যুকারাদণ্ড পেয়েছেন ২৫ জন আসামি। এছাড়া যাবজ্জীবন সাজা পেয়েছেন ৯ জন আসামি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ অনুযায়ী, আসামির সাজা কিংবা খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের বিধান রয়েছে। তবে সাজাপ্রাপ্ত কিন্তু পলাতক আসামিদের আপিলের সুযোগ নেই। এছাড়া ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধনের পর অপর্যাপ্ত সাজার বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রয়েছে আপিল বিভাগে।