নিয়মিত রক্ত দানকারীদের উৎসর্গে ছোটগল্প “সতের টাকা”

আরো পড়ুন

সতের টাকা
মামুন আজাদ
উৎসর্গ: যারা নিয়মিত রক্ত দান করেন

‘ভাই আমার বউকে বাঁচান; ওর এক্ষুনি রক্ত লাগবে’ এরকম অনুরোধ জাহিদ আক্কাজ এ পর্যন্ত প্রায় বিশ একুশ বার শুনেছে। তাই বিচলিত হলো না। ধির স্থির ভাবে উত্তর দিল, ‘চিন্তা করেন না, আপনিতো আমার বন্ধুর আত্মিয়! হাসপাতালের ঠিকানাটা বলেন’।

তড়িঘড়ি করে টিউশনি শেষ করে ছুটে গেল জাহিদ। রক্ত দানের পর অনেক প্রশংসা আর কৃতজ্ঞ চাহনি পেল রোগির পরিবারের কাছ থেকে। জাহিদ শুধু জানালো বাচ্চা হলে তাকে যেন একটু জানানো হয়।

আজ ঐ পিচ্চিটার জন্মদিন ছিল অথচো সেইই দাওয়াত পেল না!

জাহিদ আক্কাজ এসব ঘঠনায় এখন আর আশ্চর্য হয় না! শুধু প্রতিবার রক্ত দেবার ডাক আসলে নিজের পকেট চেক করে সে। যাওয়া আসার ভাড়া হয়তো খুব বেশি নয় কিন্তু রক্ত দেবার পরে শুধু পানি খেলে চলে না! সাথে তরল জাতীয় খাবার, ফলের জুস ইত্যাদিও খেতে হয়। আর এসবের খরচও নেহাত কম না।

অবশ্য রোগির পরিবারকেও সে দোষ দেয় না। বেচারারা এমনিতেই রোগি নিয়ে টেনশনে থাকে! রক্তদাতার খোজ রাখার সময় কোথায়? তবুও জাহিদের ক্যামন জানি খারাপ লাগে। রক্ততো ফ্যাক্টরিতে তৈরি হয়না! তাজা রক্ত যে দান করে তার প্রতি একটু কৃতজ্ঞতা থাকাতো উচিৎ।

আজকের ডালটাও একটু টক হয়ে গ্যাছে তবু আলু ভর্তা দিয়ে খারাপ লাগছে না। চৌকির উপর নকিয়া মোবাইলটা বেজে চলেছে বিকট শব্দে, একটা সুন্দর রিংটোনওয়ালা হ্যান্ডসেট কিনতে হবে চাকরী পেলে। জাহিদ হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে করুণ স্বর ভেসে এলো, ‘ভাই আমার মায়ের জন্য রক্ত লাগবে’। ঠিকানা শুনে জাহিদ তাকে আশ্বস্ত করলো।

আড়া-আড়িভাবে হেটে আর ইজি বাইকে গেলে পাঁচ পাঁচ দশ টাকায় যাওয়া আসা সম্ভব। ঘামে শুকানো জামা পরে রওনা হলো জাহিদ আক্কাজ। পকেট চেক করতেই পাওয়া গ্যালো সতের টাকা। তার মুখে ফুটে উঠলো স্বস্তির এক স্বর্গীয় হাসি।

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ