ডেঙ্গু রোগীকে অযথা ঢাকায় না আনতে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির এ নির্দেশনা দেন।
নির্দেশনায় তিনি বলেন, ঢাকার তুলনায় ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু সংক্রমণ বেড়েছে। ডেঙ্গু বিষয়ে যে গাইডলাইন দেয়া হয়েছে, সেটি প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অযথা কাউকে যেন ঢাকামুখী না করা হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব এলাকায়ই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সারাদেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত সব রোগীর জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রয়োজন হয় না। কিছু ক্লিনিক এবং হাসপাতাল মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে রোগীকে হাসপাতালে রাখছে এবং আইসিইউতে নিচ্ছে। এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে এবং যেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন নেই কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ সেসব হাসপাতালের বিরুদ্ধেই আমাদের অভিযান পরিচালিত হবে। আমরা আমাদের রোগীদের জিম্মি করে কোনো অসাধু চক্রকে লাভবান হতে দেব না। যারা এ ধরনের কাজ করছে তারা দেশপ্রেমিক না।
ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, এ সময় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এসে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করেন। আমরা সিভিল সার্জনদের নির্দেশনা দিয়েছি কেউ যদি স্যালাইনের দাম বেশি রাখেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়। আমাদের স্যালাইনের সংকট হয়নি। বাংলাদেশে পেঁয়াজের মজুদ থাকলেও সংকট দেখা দেয়। আর্টিফিশিয়াল যে সংকট তৈরি করতে চায়, তা যেন না করতে পারে সে জন্য ব্যবস্থা হিসেবে আমরা তা বিদেশ থেকে আমদানি করছি। আমরা ৩ লাখ স্যালাইন আমদানি করছি।
এদিকে রবিবার হাসপাতালে রেকর্ডসংখ্যক রোগী ভর্তি হয়েছে। এদিন দেশের হাসপাতালে ৩ হাজার ১২২ জন রোগী ভর্তি হন। চলতি মৌসুমে এ সংখ্যা সর্বোচ্চ। এর আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর ২ হাজার ৯৯৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল। গতকাল হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৪৯ ও ঢাকার বাইরের ছিলেন দুই হাজার ২৭৩ জন। একই সময়ে মারা যাওয়া ১৮ জনের মধ্যে ৬ জন ঢাকার ও ১২ জন ঢাকার বাইরের বাসিন্দা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬৮৪ জন। এর মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৩ হাজার ২৩৩ ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ৯৪ হাজার ৪৫১ জন ভর্তি হয়েছেন।
বছরের একই সময়ে আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন এক লাখ ৫৬ হাজার ৪২৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৬৮ হাজার ৬০৩ এবং ঢাকার বাইরের ৮৭ হাজার ৮২২ জন। এখনো হাসপাতালে ভর্তি ১০ হাজার ৪৩৭ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীর হাসপাতালে ভর্তি ৪ হাজার ৬৬ আর ঢাকার বাইরে ৬ হাজার ৩৭১ জন।
এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। সে বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।